নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজার শহরের লাইটহাউজ ফাতেরঘোনা এলাকায় বিনা নোটিশে উচ্ছেদকৃত বসতভিটা ফেরতের দাবীতে মানববন্ধন করেছে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো। এরজন্য বসতভিটা হারানো লোকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার ‘মা’ উল্লেখ করে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

রোববার দুপুরে কলাতলীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাহের ভবন সংলগ্ন হোটেল ওয়েল পার্কের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা নোটিশে উচ্ছেদের শিকার হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশ নেয়। মানববন্ধনে নারীরা অন্যায়ভাবে ঘরবাড়ি হারানোর কষ্ট তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

মানববন্ধনে অংশ নেন সলেমা আক্তার। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে আমাদের ঘরবাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। এমনিতে সারাদেশ শীতে কাবু। এই অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে শিশু ও বয়স্করা মারাত্মক কষ্ট পাচ্ছে। শিশুরা ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বয়স্করা মৃত্যু পথযাত্রী হতে বসেছে। কিন্তু প্রশাসন একবার খবরও নেয়নি। আমরা কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়?

তিনি আরও বলেন, পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া-টেকনাফের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে, এখনও হচ্ছে। কিন্তু ফাতেরঘোনার মানুষ কি সরকারের শত্রু? তা না হলে কোন ধরণের নোটিশ ছাড়া কিভাবে হতদরিদ্র লোকজনের মাথা গোঁজার ঠাই কেড়ে নেয়। আমরা আমাদের বসতভিটা ফেরত চায়।

মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাজী মোস্তাক আহমেদ শামীম, ছাত্রলীগ নেতা মনসুর উদ্দিন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সালেহা আক্তার আখি, স্থানীয় যুবক আল আমিন, ছাত্রলীগ নেতা নাফিস ইকবাল প্রমুখ।

কাজী মোস্তাক আহমেদ শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি সব সময় দরিদ্র মানুষের কথাই ভাবেন। অসহায়-দরিদ্র মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। কিন্তু ফাতেরঘোনা এলাকার শত শত মানুষকে কোন ধরণের পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের আগে একবার নোটিশও করা হয়নি। উচ্ছেদের শিকার মানুষ গুলো মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে এখন চরম কষ্টে দিনযাপন করছে।

তিনি আরও বলেন, যেদেশের প্রধানমন্ত্রী ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পারে, সেদেশের হাজার খানেক মানুষের বাসস্থান কেড়ে নেওয়া কি খুব জরুরি। এখন মানুষ গুলো কিভাবে দিনযাপন করছে সরকার সেই খবর কি নিচ্ছে। অসহায় এসব মানুষ গুলোকে দ্রুত তাদের বাসস্থান ফেরত দিতে হবে।

মানববন্ধনে উচ্ছেদের প্রতিবাদ স্বরূপ বিভিন্ন স্লোগান লেখা ফেস্টুন দেখা যায়। একটি ফেস্টুনে লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশী, এদেশের মাটিতে বসবাসের অধিকার আছে’। আরও লেখেন, ‘মানবতার মা প্রধানমন্ত্রীর পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ হবে না’, ‘বাপ দাদার ভিটামাটি রক্ষায় মোরা একজোট’ ইত্যাদি।

ফাতেরঘোনা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার মানুষগুলো অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায়। জীবনের সমস্ত সম্বল ব্যয় করে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাই করেছিলেন। কিন্তু বিনা নোটিশে সেই মাথা গোঁজার কেড়ে নেওয়ায় এখন তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ফাতেরঘোনা এলাকার সমতল ভূমিতে কোন রকম থাকছে। এই করুণ অবস্থায় অনেক শিশু ও বয়স্করা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজও নেয়নি। প্রশাসনের এমন ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করছে স্থানীয়রা।