ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী :
মহেশখালীর হোয়ানক এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে লোকালয়ের জনবসতি উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দেওয়ায় এলাকাবাসীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা। জনবসতি এলাকায় বাড়ীঘর উচ্ছেদ না করে খালি জায়গায় রাস্তা নির্মাণের জন্য স্থানীয় ককসবাজারের জেলা প্রশাসনে বার বার আপত্তি জানিয়েও কাজ না হওয়ায় অবশেষে নিজেদের বাস্তু ভিটা রক্ষায় প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ এলাকায় বসবাসকারীরা আইনের আশ্রয় নিতে দ্বারস্থ হয়েছেন হাইকোর্টের।

প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ এলাকায় বসবাসকারীদের অভিযোগ স্থানীয় ককসবাজারের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গায় যাতায়তের জন্য মহেশখালীর গোরকঘাটা-জনতা বাজার প্রধান সড়ক থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে জনবসতি ছাড়া খালি জায়গা থাকা সত্বেও মনগড়া ভাবে লোকালয়ের জনবসতি উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দেওয়ায় প্রস্তাবিত এলাকার মসজিদ,মন্দির,শ্লশান,কবরস্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যদের ৪/৫টি বাড়ীসহ প্রায় ৬০টি পরিবারকে চরম ক্ষতির মূখে ঠেলে দিচ্ছে। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ লোকালয়ের জনবসতির ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা না করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়া দেওয়া নোটিশে জনবসতির ৬০টি পরিবার উচ্ছেদ করা হলে একই পরিমাণ টাকায় অন্য স্থানের জমি না পেয়ে তারা উদ্বাস্তু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনায় দিনাতিপাত করছে।তাই তারা মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে জনবসতি উচ্ছেদ না করার দাবী জানিয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক এলাকায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকার প্রায় ৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে। সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের স্বার্থে জমির মালিকরা নির্দ্বিধায় অধিগ্রহলে জমি ছেড়ে দিলেও স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের মনগড়া সিদ্ধান্তে উল্লেখিত প্রকল্প এলাকায় যাতায়তের জন্য প্রধান সড়ক থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে জনবসতি ছাড়া খালি জায়গা থাকা সত্বেও হোয়ানক ইউনিয়নের জামাল পাড়া এলাকায় মনগড়া ভাবে লোকালয়ের জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে ৬০টি বাড়ী কাঁচা,পাকা ঘর উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণের জন্য ১০ একর জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দেয়।

নোটিশ পাওয়া পরিবার গুলো জানান,সরকার বাড়ী ভিটার জমির ও অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণের মুল্য উল্লেখ করে দিয়েছেন একর প্রতি প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে ভিন্ন জায়গায় দুরে থাক,একই মৌজার এলাকায়ও একই পরিমাণ টাকা দিয়ে জমি কিনে তারা বসতি স্থাপন করতে পারবে না। ফলে তারা বাড়ী ভিটা ছাড়া হয়ে উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাছাড়া জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকার হিন্দু মুসলিম ৬০ পরিবারের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বির্সজন দেওয়া শহীদ পরিবারের ৪/৫টি বসতবাড়ী ছাড়াও বিপুল পরিমাণ গাছপালা,কাঁচা পাকা ঘরবাড়ী ও মসজিদ,মন্দির,শ্মশান,কবরস্থান রয়েছে।

তারা এ ব্যাপারে ককসবাজারের জেলা প্রশাসকের বরাবরে একাধিক বার লিখিত ভাবে আপত্তি জানানোর পরেও কোন সুরাহা না করায় অবশেষে মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলা নং ৩৯৩১/১৬ দায়ের করেন। রিট পিটিশনের বাদী হোয়ানক ইউনিয়নের জামাল পাড়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র আবুল কাশেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান সুভাস চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ অফিস মনগড়া ভাবে প্রধান সড়ক থেকে সংযোগ সড়কের জন্য প্রস্তে ৬৭০ ফুটের বিশাল রাস্তার জন্য প্রচুর ঘরবাড়ী স্থিত এলাকার উপর দিয়ে পরিমাপ তুলে দিয়েছেন তাতে ৬০টি পরিবারের প্রায় সহ¤্রাধিক লোকজন বাড়ীঘর হারা হয়ে উদ্বাস্তু হবে তা এক বারও ভেবে দেখেনি। অথচ উক্ত জায়গার উত্তর ও দক্ষিণ পাশে প্রধান সড়ক থেকে খালী জায়গা রয়েছে তাতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে এসব পরিবার ক্ষতির সম্মূখিন হতো না।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বর্তমান নক্সা মতে গ্রামের জনবসতির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে বাড়ী ঘর স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে তারা ৬০টি পরিবারে ৩১ কোটি,৪৭ লক্ষ,৫০ হাজার টাকার ক্ষতির সম্মূখিন হবে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থরা ককসবাজারের জেলা প্রশাসক ও বর্তমান সরকারের ভূমিমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালী জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের দাবী জানান।