শফিক আজাদ, উখিয়া:

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী খালের সরকারি ইজারা সীমানা ব্যতিত বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ ভাবে বালি লুটপাটের মহোৎসবে নেমেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। উপজেলার একমাত্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা থাইংখালী বাজার থেকে তেলখোলা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার খালের প্রায় ১৬ টি পয়েন্টে ডিজেল চালিত মেশিনের সাহায্যে নির্বিচারে অবৈধ ভাবে বালি উত্তলনের ফলে ২ শতাধিক একরের মতো ফসলী জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে প্রতি গাড়ী থেকে থাইংখালী বিট কর্মকর্তাকে দিতে হয় ২শ টাকা। আর এই অবৈধ বালি বানিজ্যের কারনে যানবাহন চলাচলে সড়ক থেকে শুরু করে সাধারন পথচারী, স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন অবৈধ বালি বানিজ্যের দৃশ্যপট ঘুরে ও স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, থাইংখালী বাজার হতে তাজনিমারখোলা জুনু মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত সরকারি ইজারা থাকলেও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র থাইংখালী বটতলী হতে তেলখোলা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খালের ১৬ টি পয়েন্টে দৈনিক দেড়হাজারেরও অধিক পরিমান ডাম্পার ভর্তি বালি উত্তোলন করছে। এ নিয়ে বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোন খবর নেই। এসব পয়েন্ট থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে হুমকি মূখে পড়েছে তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প, থাইংখালী-তেলখোলা সড়ক, ফসলি জমি ও বসতভিটা। এছাড়াও তেলখোলা, মোছারখোলাসহ ৯ গ্রামের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ সহ স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্টানে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অবৈধ বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানায়, তারা প্রতিটি গাড়ী বালি বিক্রি করে থাকে আড়াই থেকে ৩হাজার টাকায়। আর এই টাকা থেকে গাড়ী প্রতি বিট কর্মকর্তাকে দিতে হয় ২শ টাকা। বাকী টাকার সিংহভাগ চলে প্রশাসনের লোকজনের কাছে। যার কারনে এলাকার কোন ব্যাক্তি তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছেনা। আর সরকার এ অবৈধ বালি উত্তোল ও বালি বানিজ্যের খাত থেকে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত থাইংখালী বিট কর্মকর্তা মুরশেদ আহমদ নিকট এসব বিষয়ে জানার জন্য একাধিক বার যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তেলখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার ফরিদুল আলম জানান, বটতলী থেকে তেলখোলা পর্যন্ত খাল থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে স্কুলে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও তেলখোলা এলাকার স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রীরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভাবে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। সে এসব অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করা না হলে আগামীতে এই সড়ক দিয়ে যানবাহনতো দুরের কথা পায়ে হেটে চলাচল করতেও দুরহ হবে বলে মন্তব্য করেন।

স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি যতটুকু জানি সরকারি ইজারাদার ছাড়াও একটি চক্র অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করছে। আমি এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন কারনে পরিবেশ ও বন সম্পদের কোন ক্ষতি হলে অবৈধ বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করা হবে।

অবৈধ বালি উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ ফখরুল ইসলাম জানান, সরকারি ইজারার বাইরে কেউ অবৈধ বালি উত্তোলন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতিমধ্যে এ ধরনের বেশ কয়েকটি বালি মহালে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলনের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্ধ সহ অবৈধ বালি উত্তোলনকারীকে জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।