জসিম আজাদ :

স্বাধীনতার ৪৭ বছর আজ। এ স্বাধীন কোর্টবাজারের বয়সও ৪৭ (উখিয়ার কোর্টবাজার একই মানচিত্রে)। এ কোর্টবাজারকে কেন্দ্র করে উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চারটি ইউনিয়ন (রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং ও রাজাপালং একাংশ) ও রামু উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকসহ প্রায় তিন’লক্ষের অধিক মানুষের বসবাস। এ মানুষগুলো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলেও শিক্ষা সুবিধা থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে। কেননা এ এলাকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কোন কলেজ নেই।

এসব শিক্ষা বঞ্চিত এলাকার মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে- শামলাপুর, মনখালী, মাদারবনিয়া, চেপটখালী, চুয়াংখালী, ইমামের ডেইল, বাইলাখালী, রুপপতি, চেংছড়ি, পাটওয়ার টেক, মোহাম্মদ শফির বিল, ইনানী, নিদানিয়া, , মাংগালা পাড়া, পেচার দ্বীপ, সোনাইছড়ি, লম্বরী পাড়া, পাইন্যাশিয়া, কোলাল পাড়া, চৌধুরী পাড়া, গুরা চাঁদ মাতব্বর পাড়া, ধুরুং খালী বড়ুয়া পাড়া, ধুরুংখালী শীলপাড়া, বউ বাজার, গুরা মমিয়া গেরেজ, সেতুনির টেক, মরিচ্যা গরুর বাজার, মরিচ্যা বাজার, ঘাট ঘর, গুয়ালিয়া, টাইংগাকাটা, ধুয়া পালং, রাবেতা, ধেঁচুয়া পালং, মরিচ্যা চেক পোষ্ট, হিরার ডিপ, জামবাগিচা, হলদিয়া দীঘির পাড়, পাতাবাড়ি, খেউয়াছড়ি, পাগলির বিল, বেলা কবিরের দোকান, নতুন বাজার, বড়বিল, খাজুর গাছ তলা, ধুরুংখালী স্টেশন, জনাব আলী পাড়া, বাইন্না পাড়া, সাবেক রুমখা, ক্লাস পাড়া, খোন্দাকার পাড়া, দক্ষিন বড়বিল, ঘাটি পাড়া, ভেলুযার মার মসজিদ, তেলিপাড়া, ভালুকিয়া, হারুন মার্কেট, আমতলি, রত্না পালং, রুহুল্লার ডেবা, তেলি পাড়া, সাদৃকাটা, পশ্চিম রত্না, পিনিজির কুল, তুতুরবিল, হরিণ মারা, কামরিয়ার বিল, জাফর ফল্লন পাড়া, গয়াল মারা সহ আরো অসংখ্য এলাকার লোক জন যারা উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে।

এ কোর্টবাজারে একটি কলেজ করার বিষয়ে গত ৪৭ বছরে দুই বার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। পরে অদৃশ্য কারণে সেই সব উদ্দ্যোগ থেমে যায় নতুবা থামিয়ে দেয়।

ফলাফল- আজ অবধি জন্ম হয়নি একটি কলেজের।

নব্বই দশকের মাঝামাঝির আগে বেশ কয়েকজন শিক্ষিত যুবক ও সমাজপ্রতি শ্রেনীর কিছু লোক কলেজ করার বিষয়ে প্রথম উদ্দ্যোগ গ্রহণ করে বেশ কিছুদিন কাজও করেছিলেন। পরে উদ্দ্যোগটি বাস্তবায়ন হয়নি। থেমে যায় স্বপ্নের কলেজ।

এর মধ্যে কেটে যায় দুই দশক।

২০১৭ সালে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সত্তর বছর পুর্তিতে “গৌরবের-৭০” উদযাপিত হয়। এ সফল উদযাপনের পর কলেজ করার শুভ কাজটিতে আমরা কয়েক জন তরুণ, যুবক, মুরব্বী মিলে দ্বিতীয় বারের মতন হাত দিয়েছিলাম। অনেকটা হয়েও গিয়েছিলো। কিন্তু এবারও কতিপয় রাজনীতিবিদ রাজনীতির চর্চা করতে গিয়ে থামিয়ে দেয় উদ্দ্যোগটি, সাথে সাথে থেমে যায় কলেজটিও।

গত দুই উদ্দ্যোগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি আবারও কলেজ করার এ মহান কাজটি শুরু করতে পারি না? যেটি হবে তৃতীয় ও শেষ উদ্দ্যোগ।

তবে এ যাত্রায় অবশ্যই কোন রাজনীতিবিদ থাকবে না।
চল্লিশর্ধো কোন লোক থাকবে না।
কোন ধনী থাকবে না।

আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে ‘রাজনীতিবিদ’ ও ‘অর্থনৈতিক ধনী’ পরিবারের কোন সন্তান এ মফস্বলে পড়াশোনা করেনি, করবেও না। তাই তাদের কলেজের দরকার নেই। তাছাড়া মফস্বলে কলেজ না হলে, ছেলে-মেয়েরা মূর্খ থাকলে তো তাদেরই সুবিধে।

অভাবি পিতার সন্তানকে শহরে পাঠিয়ে, নামি-দামি কলেজে লেখাপড়ার খরচ মেটানো সম্ভব না। শুধু মাত্র এই কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার কলেজ আমাদেরকেই করতে হবে।

গান্ধির কবিতার লাইন গুলো কি আমরা আবার একটু মনে করতে পারি না?

“আসছে পথে আধার নেমে
তাই বলে কি রইবো থেমে?
বারে বারে জ্বালবো বাতি
হয়তো বাতি জ্বলবে না।
তাই বলেতো ভিরুর মতন
বসে থাকলে চলবে না।

আসুন শিক্ষাবঞ্চিতরা মিলে একটি কলেজ করি।

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, ডিবিডিনিউজ২৪ডটকম।