|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

লুৎফুর রহমান কাজল। কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত একক প্রার্থী। একই আসনের সাবেক নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। গত দুই ডিসেম্বর রোববার কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অন্যান্যদের সাথে লুৎফুর রহমান কাজলের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রটির বাছাইকার্য চলছিল। এসময় আয়কর সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয় নিয়ে একই আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও তাঁর আইনজীবী তীব্র আপত্তি জানিয়ে লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি বাতিলের দাবী জানান। কিন্তু বাছাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আয়কর কর্মকর্তা সহ অন্যান্যরা বিষয়টি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা সম্পৃক্ত না হওয়ায় লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি গ্রহনের পক্ষে তাদের জোরালো মত প্রদান করেন। এতে সাইমুম সরওয়ার কমল রেগে গেলে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার স্বার্থে একইদিন বিকেল সাড়ে চারটায় লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি গ্রহনের বিষয়ে তাঁর কার্যালয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়ে দেন। পরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের বহুমুখী চাপের মুখে রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেন বিন্দুমাত্র নতি স্বীকার নাকরে সবকিছু পরিপূর্ণ থাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষনা করেন। লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি সাইমুম সরওয়ার কমলের তীব্র আপত্তির মুখেও বৈধতা পাওয়ার সাথে সাথে লুৎফুর রহমান কাজল এ নির্বাচনে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেন। এ বিজয়ে লুৎফুর রহমান কাজলের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। লুৎফুর রহমান কাজলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মনোবল আরো চাঙ্গা হয়ে উঠে। অন্যদিকে, এঘটনায় সাইমুম সরওয়ার কমল সাধারণ ভোটারদের মাঝে মৃদু বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায়। তাঁর কর্মী, সমর্থক-অনুসারীরা কিছুটা হলেও হতাশ হয়।

গত দুই ডিসেম্বর লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষনার পর সাইমুম সরওয়ার কমল তাৎক্ষনিক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন-লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করবেন। সাইমুম সরওয়ার কমলের যেমন কথা-তেমন কাজ। সাইমুম সরওয়ার কমল সত্যি সত্যি তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপীল দায়ের করেন। যার নির্বাচন কমিশনের আপীল মামলা নং-৩৮৩/২০১৮। আপীল মামলাটি গত ৮ ডিসেম্বর শনিবার বেলা ১২’৪৫ মিনিটে আপীলকারী সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট দেবুল দে শুনানী করেন। শুনানী শেষে নির্বাচন কমিশন আপীল মামলাটি খারিজ করে দেন। এসময় সাইমুম সরওয়ার কমল নিজেও নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত ছিলেন। সাইমুম সরওয়ার কমলের দায়েরকৃত আপীল মামলাটি খারিজের মধ্য দিয়ে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় দফায় বিজয় অর্জন করলো। পর পর এদু’টি বিজয় লুৎফুর রহমান কাজলের জন্য বিনা পরিশ্রমে, বিনা অর্থে, নিঃসন্দেহে বিশাল প্রাপ্তি। এপ্রাপ্তি লুৎফুর রহমান কাজলের হলেও কষ্ট, পরিশ্রম, সময়, মেধা সবকিছু খোয়া গেছে সাইমুম সরওয়ার কমলের। সাইমুম সরওয়ার কমল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় (বিকাশ!) নির্বাচিত সরকারীদলের বর্তমান এমপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাইমুম সরওয়ার কমল প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফুর রহমান কাজলের সাথে নির্বাচন করতে কি বেশী ভয় পান? নাহয়-সাইমুম সরওয়ার কমল কেন বার বার ঠুনকো ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি নিয়ে লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের শরনাপন্ন হচ্ছেন? সাইমুৃ সরওয়ার কমল এসব বিতর্কিত কাজ করে লুৎফুর রহমান কাজলকে কেন বার বার রাজনৈতিকভাবে অহেতুক জিতিয়ে দিচ্ছেন? নাকি সাইমুম সরওয়ার কমলের পরামর্শদাতারা তাঁকে মিসগাইড করছেন। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন-সাইমুম সরওয়ার কমল এভাবে চলতে থাকলে লুৎফুর রহমান কাজলের জনপ্রিয়তায় দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জেতার আগে লুৎফুর রহমান কাজল হয়ত আরো অনেকবার সাইমুম সরওয়ার কমলের এধরনের আত্মগাতি পলিসির কারণে জিতে যাবেন।
অন্যদিকে, লুৎফুর রহমান কাজল বলেছেন- আমার জনপ্রিয়তা ও আমার প্রতি জনগণের আস্থা ও ভালবাসায় ভীত হয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মিথ্যা তথ্য ও কুঠকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মানুষকে অহেতুক বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। মহান আল্লাহতায়লার অসীম রহমত আর মানুষের আন্তরিক দোয়ায় সেই অপচেষ্টা কখনো সফল হবেনা। তিনি বলেন-বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ জনগণ আর দেবেনা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বোগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসাবে নিয়ে এআন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে সক্রিয়ভাবে শরীক হওয়ার জন্য আহবান জানান। লুৎফুর রহমান কাজল-কোন গুজবে কান নাদিয়ে ৩০ ডিসেম্বর প্রত্যেকে নিজের ভোট নিজে দিয়ে স্বাধীনরাষ্ট্রে নিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান। লুৎফুর রহমান কাজল বলেন- “রাষ্ট্রীয় আদালতে নয়, গণমানুষের ভালবাসার আদালতে নৈতিকতার বন্ধনে আজীবন থাকতে চাই”। এটা যেন আল্লাহতায়লা কবুল করে নেন।
উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপি’র একজন শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও বিএনপি’র মূল প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল তৎকালীন আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

(লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)