|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

কক্সবাজার-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মৌলভী হাজী ইলিয়াছ আবারো কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে এবং জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহিবুল্লাহ কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাক্ষর করে ইতিমধ্যে তাঁরা দু’জনকে আসন দু’টির অনুকূলে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র প্রদান করেছেন। জাতীয় পার্টি মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরীকদল। মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগ ইতিমধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলমকে ও কক্সবাজার-২ আসনে আশেক উল্লাহ্ রফিককে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরীকদল এবং মন্ত্রীসভায় তাদের দলের প্রতিনিধিত্ব থাকার পরও কক্সবাজারের এদু’টি আসনে জাতীয় পার্টি কেন এককভাবে দলীয়প্রার্থী মনোনয়ন দিলেন, তানিয়ে ভোটারদের মধ্যে কৌতুহল ও জল্পনা কল্পনার শেষ নাই। এটা এখানকার ভোটাদের জন্য আলোচনা-সমালোচনার একটা নতুন উপাদান। কেউ বলছেন, এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল, কেউ বলছেন, আবার মহাজোটের শীর্ষ সংগঠন আওয়ামীলীগকে মনসতাত্ত্বিকভাবে চাপে রাখার জন্য এ কৌশল নেয়া হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ঘন্টায় ঘন্টায় পরিবর্তন করা নাটক বুঝা খুবই মুশকিল। যে দু’জন প্রার্থী জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে মৌলভী হাজী ইলিয়াছ গত ৫ বছর ধরে একই আসনে মহাজোটের সংসদ সদস্য থেকে এলকার উন্নয়ন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীরর কল্যাণে অনেক কাজ করতে পেরেছেন। যাঁর গন্তব্য ছিল একই আসনে আবারো মহাজোটের পক্ষে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়া। একইভাবে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ মরহুম এডভোকেট মওদুদ আহমদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী পরিবরের সন্তান মুহিবুল্লাহও জাসদের বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার উদ্যেশে উপকূলীয় আসন মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। দু’জনেরই স্ব স্ব আসনে যথেষ্ট ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিচয় ও অবস্থান রয়েছে।

এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেছেন, জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রাপ্ত মৌলভী হাজী ইলিয়াছ ও মুহিবুল্লাহ্ অবশ্যই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে স্ব স্ব আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক জমিদার রুহুল আমিন সিকদার জানিয়েছেন, তাদের দলীয় প্রার্থী বিমানযোগে ২৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসবেন। পরদিন ২৮ নভেম্বর তাদের প্রার্থীদ্বয় রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। জমিদার রুহুল আমিন সিকদার জানান, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়নপত্রটি জিয়া উদ্দিন বাবলুর হাতে এখনো রয়েছে। জিয়া উদ্দিন বাবলুও কক্সবাজার-৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সম্ভাবনা খুব বেশী। তবে সেটা জিয়া উদ্দিন বাবলু’র ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করবে। কারণ তিনি হচ্ছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও চেয়ারম্যানের আপন ভাগনী জামাই। জমিদার রুহুল আমিন সিকদার আরো বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মহাজোটের শীর্ষ সংগঠন আওয়ামীলীগ যথার্থ মূল্যায়ন নাকরায় কক্সবাজারের ন্যায় সারাদেশে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। এরমাঝে, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ জরুরী চিকিৎসার(!) জন্য দ্রুত বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ায় মহাজোটের নির্বাচনী পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে জমিদার রুহুল আমিন সিকদার আশংকা পোষন করেছেন।

কক্সবাজার-১ ও কক্সবাজার-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা আদৌ শেষপর্যন্ত কি নির্বাচন করবেন, নাকি মহাজোটের শরীকদল হিসাবে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের সাথে বোঝাপড়া করে ফেলবেন- সেটা জানার জন্য আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষদিন পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে নির্বাচন বোদ্ধারা মন্তব্য করেছেন।