ইমাম খাইর, সিবিএন:
ফেরারী জীবন আর কত! স্বজন বিচ্ছেদ, প্রশাসনের ভয়ে কাতর মাদক সংশ্লিষ্টরা এখন আর আত্নগোপনে থাকতে চাচ্ছেনা। তাদের অনেকে নিরাপদে ফেরার পথ খোঁজছে।
তবে, সেই পথটি কি? কোন পথেইবা গেলে মিলবে জীবন সংহার না হওয়ার নিশ্চয়তা? সেটিই এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চিন্তার বিষয়। গত এক মাস ধরে সিবিএন-এর অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিলেছে আরো অনেক চমৎকার তথ্য-যা পরের কিস্তিতে প্রকাশ পাবে।
সরকার মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর। মাদকরোধে সীমান্তে কঠোরতা অবলম্বন করছে বিজিবি। কাজ করছে কোস্টগার্ড, পুলিশ, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। তবু ঠেকানো যাচ্ছেনা মাদকদ্রব্য।
সম্প্রতি ৫ গ্রামের বেশি ইয়াবা পেলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাশ করেছে সরকার। এরই মাঝে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠলে শোনা যায় মাদক ব্যবসায়ীরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর।
সব মিলিয়ে দিন দিন ভয়ানক হয়ে ওঠা এই মাদকের রাজ্যকে কিভাবে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়-তাও ভাবার বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন- যেভাবে হোক মাদকের জগত নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। না হলে দেশ ও সমাজের জন্য আগামীতে করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
মাদকের কারণে সরকারের ‘হিটলিস্টে’ থাকা দেশের এলাকাসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। রিপোর্ট মতে, এখানকার অধিকাংশ মানুষ মাদকের সাথে জড়িত। প্রায় প্রতি ঘরে রয়েছে মাদকের মামলার আসামী। ইতোমধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে শীর্ষস্থানীয় অনেক মাদক কারবারী। শুধু চলতি মাসের গত ১৬ দিনে মারা গেছে অন্তত ১০ জন। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর ঘরবাড়ী। পালিয়ে বেড়াচ্ছে তালিকাভুক্তরা।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ‘নিরাপদ ফেরার পথ’ খোঁজছে। বিশেষ করে গত ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ৬ বাহিনীর ৪৩ জন জলদ্যু আতœসমর্পণের খবরে সেই পথে এগুতে চাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারাও সুযোগ পেলে আত্নসমর্পণ করবে। বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীদের সাথে কথা বলে তার সত্যতা মেলেছে।
এদিকে, এনামুল হক এনাম নামে মাদক কারবারে অভিযুক্ত টেকনাফের এক ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস সিবিএন-এর এই প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। যেখানে এনাম তার জীবনের অনেক দুঃখগাঁথা কথা বর্ণনা দিয়েছেন অবলিলায়। নিরাপদ জীবনে ফিরতে তিনি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো
দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে ফিরতে চাই নিরাপদ জীবনে…
জীবন যন্ত্রনা আর সইতে পারছিনা।নিজ ঘরে ঘুমাতে পারিনা।স্বজনের চেহারা দেখিনা অনেক দিন।সব কিছু থেকেও যেন নেই।আজ বড় অসহায় হয়ে গেলাম।
সময় পার করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।দিন যায় রাত যায়। কিন্তু আমার দুঃখ ফুরাচ্ছে না।যোগ হচ্ছে নতুন নতুন টেনশন।জীবনটাই যেন পাপে ভরা!
বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেম্বার হয়েও জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারছিনা।২০১৫সালে টেকনাফের সাংঘাতিক পরিবারের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা মমামলার আসামী হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে।তারপরেও থেমে নেই ইয়াবা পরিবার হামজালাল গং খুনি ছিদ্দিক।
আমাকে বন্ধী রেখে আমার ভাই শহীদ আজিজুল হক মার্কিনকে প্রকাশ্যে হত্যা করে সেই সাথে আরেক ভাই হাফেজ নুরুলহক মোজাহেরী ভাইকেও গুলিও কুঁপিয়ে চিরজীবনব্যাপী পঙ্গু করে। গত ৮নবেম্বর আমার শহীদ ভাইয়ের মেঝো মেয়ে শহীদ আজিজুল বালিকা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী উম্মে কুলছুম টমটম গাড়ির দুর্ঘটনার কবলে পরে গুরুত্বর আহত হয়।এতিম বাচ্ছাটার দুঃখের সময় পাশে আসতে দিচ্ছে না আমাকে।প্রশাসন যদি আন্তরিকভাবে সুস্থ তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন হবে মূলত তাড়াই ইয়াবার গডফাদার ও নানা অপরাধের রাজা।প্রতিনিয়ত ভয় তাড়িত সময় পার করছি।
দুঃসহ জীবন যন্ত্রনা থেকে মুক্তির পথ চাই। ফেরারী জীবন ছেড়ে স্বভাবিক জীবন স্রোতে হাঁটতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আমাকে মুক্ত করুন।হাত ধরে তুলে আনুন নতুন পথে। আরেকবার নতুন করে জন্ম নিতে চাই।
দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলছি…
আমি কোনভাবেই মাদকের সাথে জড়িত নই।হারাম রুজির এক পয়সাও আমার পকেটে ঢুকেনি। ছেলেবেলা থেকে মানুষের মাঝেই বেড়ে ওঠেছি।সবাই আমাকে চেনে জানে।খেলাধুলাই ছিল আমার নেশা পেশা।অন্য কিছু ভাবিনি।ভাবার সুযোগইবা কয়? আমি একজন কৃতি ফুটবলার।বাংলাদেশে সবাই আমাকে কমবেশী চেনে।বর্তমান টেকনাফ শেখ জামাল ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করছিঃনাফসিটি ফুটবল ক্লাবের অধিনায়ক,নাজিরপাড়া রায়হান স্মৃতি ফুটবল ক্লাবের সভাপতি।নাজির পাড়া নাফ ইউনিটি ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করছি শহীদ আজিজুল হক ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করছি।সেইসাথে টেকনাফ উপজেলা ক্রীড়া পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক।টেকনাফ ক্লাব সমিতির যুগ্ম আহবায়ক টেকনাফ খেলোয়ার সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য।জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব টেকনাফ শাখার পরিচালক দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করে আসছি।প্রতিষ্ঠিত করছি নাজির পাড়া শহীদ আজিজুল হক বালিকা মাদ্রাসা।
প্রতিষ্ঠিত করেছি।এতিমখানা,নুরানী মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২২মাস কারাগারে থেকেও সেখান থেকে মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি।জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালবাসাই তার প্রমাণ।উপকার ছাড়া জীবনে কারো ক্ষতি করিনি।তবু মাদকের তালিকায় আমার নাম! কেন?
মূলতঃ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কারণেই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারীরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে।কাল হয়ে গেলো আমার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা।তারা হয়তো ভেবেছে,আমি আগামীতে তাদের পথের কাঁটা হবো।তাই প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকেও তাদের মতো ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে চিত্রিত করেছে।সাজানো মামলায় আসামী বানিয়েছে। এই অপবাদের বিচারের ভার আল্লাহকে দিলাম। আল্লাহই জানেন আমি আদৌ অপরাধী কিনা? যা হবার হয়ে গেছে।
এখন অভিযোগ থেকে মুক্তির সঠিক রাস্তা চাই।নিজের জীবন বাতলিয়ে দেবার সুযোগ চাই।অন্তত একবার চাই।সরকার চাইলে আত্নসমর্পন,সাধারণ ক্ষমা বা অন্য কোন পথ বের করে আমার মতো শত শত যন্ত্রণাকাতর ব্যক্তির জন্য নতুন পথ রচনা করতে পারে।সেই প্রত্যাশায় রইলাম।
কক্সবাজার তথা টেকনাফের সাংবাদিক ভাইদের কি হৃদয়ে স্থান হবে আমার মতো দেশের শত্রু ব্যক্তির এই নগণ্য আবেদন।

এনামুল হক এনাম
অধিনায়ক, নাফসিটি ফুটবল ক্লাব
ইউপি সদস্য, টেকনাফ সদর ৮নং ওয়ার্ড।