ডেস্ক নিউজ:

গণভবনে শেষ হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সংলাপ। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে সংলাপ শেষ হয়। বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হওয়া সাড়ে তিনঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে খোলামেলাভাবে অনেক বিষয় আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের নেতারা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়ে আইন তার নিজের গতিতে চলবে এমন মনোভাবই দেখানো হয়েছে।

সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আলোচনা ভালো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। প্রসঙ্গত বর্ষীয়ান এই আইনজীবীর নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ বৈঠকে অংশ নেয়।

তবে সংলাপের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য না করে গণমাধ্যম ত্যাগ করেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, ‘এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন ব্রিফ করবেন।’ আবার বিএনপির আরেক নেতা ড. মঈন খান বলেছেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে মহাসচিব ব্রিফ করবেন।’

এ বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্ল্যাহ বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে।
বেরিয়ে যাওয়ার সময় দলটির আরেক নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আলোচনা খুবই সুন্দর হয়েছে। তবে আলোচনার সফলতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারবো না।’

আর সরকারের জোটে থাকা জাসদ (আম্বিয়া-বাদল) এর নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল বলেছেন, ‘খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ইটস অ্যা পলিটিক্যাল স্টার্ট।’ এর আগে নৈশভোজের বিরতি দিয়ে রাত ১০টার দিকে সংলাপ আবারও শুরু হয়।

ওই সূত্রের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাত বাড়ায় ৯টা ২০ এর দিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে নৈশভোজে উভয়পক্ষের সব নেতা অংশ নেন। উভয়পক্ষের নেতাদের আসনের সামনেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার খেতে খেতেই তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন। তবে রাত ১০টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও আলোচনা শুরু হয়ে তা পরবর্তী আধাঘণ্টা স্থায়ী হয়।

সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে সংলাপের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরদিন আওয়ামী লীগ সংলাপে সম্মতির কথা জানায়। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সময় নির্ধারণ করে ২৯ অক্টোবর সকালে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনের বাসায় চিঠি পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগ।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এসএম আকরাম; গণফোরামের সদস্য সচিব মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল মালেক রতন ও তানিয়া রব; ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন। আরও থাকছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া বৃহস্পতিবার বিকালে আরও ৪ সদস্য বৃদ্ধি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ৪জন হচ্ছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম সফিক উল্লাহ এবং মোতাব্বের খান।’

আওয়ামী লীগের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে দলের বাইরে দলটির শরিক ১৪ দলীয় জোটের তিন নেতাও ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন—আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, আবদুল মতিন খসরু, ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আনিসুল হক, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও শ. ম. রেজাউল করিম এবং শরিকদের মধ্যে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মইন উদ্দীন খান বাদল ও দিলীপ বড়ুয়া।

শুক্রবার বিকল্প ধারার সভাপতি বি চৌধুরীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শাসক দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।