আহমদ গিয়াস: 
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমার সেনাবাহিনী (টাটমাডো) প্রধানসহ ‘রোহিঙ্গা গণহত্যায়’ অভিযুক্ত সেনা  সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হলে ‘হাতে অস্ত্র’ তুলে নেবেন বলে হুংকার দিয়েছেন বিশ্বব্যাপী বহুল সমালোচিত মিয়ানমারের ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু আসিন উইরাথু। রোববার সেদেশের সেনাবাহিনীর সমর্থনে ইয়াঙ্গুনের শহরতলীতে  আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ হুংকার দেন। সমাবেশে সেনাপ্রধানের ছবিযুক্ত প্লেকার্ড নিয়ে কয়েক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। এ সমাবেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে প্রভাবিত ও বিলম্বিত করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি অপপ্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
গত বছর মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে (আরাকান) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর চালানো ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান থেকে বাঁচতে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যাসহ বর্বর নির্যাতন নিয়ে বিশ্বমহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এখন সেদেশের সেনা প্রধান অং  হ্লাইংসহ তার অধস্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এরই মাঝে সেনাবাহিনীর সমর্থনে রোববার ইয়াঙ্গুন শহরতলীর সিটি হলের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল।
বৌদ্ধ ভিক্ষু উইরাথো মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণাত্মক বক্তব্যের জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচিত। বৌদ্ধ নারীদের উদ্দেশ্যে তার উপদেশ হল- ‘তুমি একজন আফিম আসক্ত, মাতাল কিংবা বৌদ্ধভিক্ষুকে বিয়ে করতে পার, এমনকি একটি কুকুরকে। কিন্তু কোন মুসলিমকে নয়।’ এই ভিক্ষু তার ফেসবুক একাউন্ট থেকেও ঘৃণা ছড়াতেন যেটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ বছরের গোড়ার দিকে বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে গত রোববারই প্রথম তাকে প্রকাশ্যে দেখা গেল। তিনি গত বছর ২৯ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে মুসলিম সাংসদ ও অংসান সুচির আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার কো নি হত্যাকান্ডের পর খুনীদের অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট করেন, যেটি মাত্র কয়েকঘন্টার ব্যবধানে অর্ধলক্ষাধিক বার শেয়ার হয়। বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ‘দ্য ফেস অব বুড্ডিস্ট টেরর’ শিরোনামে তাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গত বছর সেনাবাহিনীর গণহত্যায় তার নেতৃত্বাধীন উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে।
রোববারের সমাবেশে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেরও বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা তখনই মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত হবে, যখন খরগোশের আওয়াজ শুনে ইদুঁর পালাবে এবং নরকের আগুণ নিভে যাবে।’  আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেই তিনি ‘সেনাসদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা’র জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেবেন বলে ঘোষণা করেন ৫০ বছর বয়সী ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ এই বৌদ্ধ ভিক্ষু। তবে তাকে অস্ত্র কে দেবে বা কোত্থেকে তিনি অস্ত্র সংগ্রহ করবেন এবং সে অস্ত্র তিনি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন সে ব্যাপারে কিছু বলেননি।
তিনি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আইসিসির কোন পদক্ষেপের বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া রয়েছে। তারা কখনও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেবে না।’
এ সমাবেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রভাবিত ও বিলম্বিত করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি অপপ্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে। এবিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক প্রফেসর মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যার ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলে। এ  কারণে আন্তর্জাতিক মহল সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি গণহত্যায় জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর এ সময়ে উগ্রপন্থীদের এমন সমাবেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত করার সামীল।’