শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ঘূর্ণিঝড় তিতলি আঘাত না হানলেও তার প্রভাবে সৃষ্ট অতিবৃষ্টিতে কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে পাহাড়ী ছরা ভেঙে, জলাবদ্ধতা হয়েছে এবং সাগরের পানি লোকালয়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তালিকায় ধানক্ষেত, পানবরজ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চিংড়িঘের ও মৎস্যঘের। এসব খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অর্ধশতকোটি টাকা হবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মহেশখালী, চকরিয়া ও টেকনাফে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে ঘরবাড়ি ক্ষতি হওয়া লোকজন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা চারদিন বৃষ্টিপাত চললেও গত শুক্রবারের প্রবল বৃষ্টিতে মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া ও হোয়ানকের নতুন তৈরি করা বিলের পানের বরজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ছরা ভেঙে ও উপচে পড়ে পানের বরজে পানি ঢুকে ব্যাপকভাবে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। একই সাথে পানিতে ব্যাপকভাবে তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেত, চিংড়ী ঘের, কাঁচা ঘর-বাড়ী। এতেও বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা, ছোট মহেশখালীর উম্বুনিয়া পাড়া, মাতারবাড়ীর, হোয়ানক, ধলঘাটা ও কালামারছাড়ার চিংডিঘেরসহ অতিরিক্ত পানিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েকশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবজোমে। একই সাথে সব এলাকায় প্রধান সড়ক ও গ্রামীণ সড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ঘটনায় মাতারবাড়ি-চালিয়াতলি সড়ক, হোয়ানক হরিয়ার ছড়ায় বিছিন্নসহ অনেক স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে। এই অপূরণীয় ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

হরিয়ারছড়া বাজারের ব্যবসায় মো: আবছার জানান, হরিয়ারছড়া ছড়া উপচে পানি ঢুকে হরিয়ারছড়াবাজার, আশেপাশের বাড়িঘর ও পানবরজসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছি। যা কখনো পূরণ করা যাবে না।

এদিকে জেলার মধ্যে টেকনাফে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা থেকে টেকনাফে ২৯১ মিলিসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। সেই সাথে তিতলির প্রভাবে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের কবলে শাহপরীর দ্বীপের দুই শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নগদ টাকাসহ ৩৪ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অতি বৃষ্টির ফলে টেকনাফের বিভিন্ন ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল পানিবন্দি হয়ে ঘরবাড়ি, ধানক্ষেতসহ বিন্নি স্থাপনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে টানা চারদিনের বৃষ্টিতে রোপন আমন ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা তিনদিন বৃষ্টি হওয়ায় মুুকুল আসা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে বেগুন, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। লবণ মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় প্রস্তুত করা অনেক মাঠের লবণ উৎপাদন ও পিছিয়ে গেছে। সেই সাথে চিংড়ি ও মৎস্যঘের তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক্ষ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
একইভাবে কুতুবদিয়ায় জোয়ারের পানিতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে আমনের ক্ষেত। পেকুয়া, রামু ও উখিয়ায়ও আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলে, ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে কক্সবাজার জেলায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ে পড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে দু’শর মতো বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাও পানি ঢুকে নি¤œ এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। তবে তেমন ক্ষতি হয়। তবে বেশি ক্ষতি হয়ে টানা বৃষ্টির ফলে জেলার প্রতিটি উপজেলায় আমনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। মহেশখালীতে বেশ কিছু পানবরজের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কিছু ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। সব ক্ষতির বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্থানীয় জননিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।