উসমান গণি ইলি
রামু থানাকে জনবান্ধব ও ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগন পুলিশের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণে জনগণ কষ্ট পায়। ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়না। পুলিশকে এড়িয়ে চলে অনেকে। ভয়ে আগের মতো বিচার নিয়ে থানায় যায়না।
সম্প্রতি প্রতিবেদককে দেয়া সাক্ষাতকারে ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, ভাল মন্দ মিলেই মানুষ। সব মানুষ খারাপ নয়। সব পুলিশ অফিসার খারাপ নয়। পুলিশ ও থানা অর্থ হচ্ছে মানেই টাকা। টাকা ছাড়া থানায় কোনো কাজ হয় না। এমন ধারণা জনসাধারণের। তবে জনসাধারণের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবুল মনসুর । এ থানায় সেবা নিতে আসা লোকজন টাকা ছাড়াই এখন সাধারণ (জিডি), অভিযোগ ও মামলা লেখা বা অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন।
গত ১৫ আগষ্ট রামু থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে যোগদান করেন মুহাম্মদ আবুল মনসুর। তিনি থানায় যোগদানের পর থেকে পাল্টে দিয়েছেন আগের চিত্র। তুলনামূলক ভালই চলছে রামু থানা।
প্রথম দিনই নবাগত ওসি হিসেবে তাকে থানায় বরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দেন- রামুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি আমার সর্বপ্রথম কাজ হবে সাধারণ জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটিয়ে রামু উপজেলাকে একটি আদর্শ ও নিরাপদ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং রামুকে মাদকমুক্ত রাখতে কাজ করে যাব।
ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর রামু থানায় যোগদানের আগে কক্সবাজার গোয়েন্দা শাখা, বাকলিয়া থানা এবং ইপিজেড থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া হাইদগাঁও গ্রামে।
মুহাম্মদ আবুল মনসুর বলেছেন, এলাকায় অপহরণ, চুরি-ডাকাতি হলে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। এদের স্থান হবে কবরে, পৃথিবীতে নয়।
তিনি বলেন, সরকার আমাকে রামুর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছে, এ দায়িত্ব পালনে আমি প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এজন্য চোর-ডাকাত কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকলে থানায় জানাতে হবে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
ওসি মনে করেন- মাদক, ইভটিজিং, জঙ্গী-সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এসব অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িতরা সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায়। এদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনতাকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামু থানায় ওসি আবুল মুনসুর যোগদানের পর থেকে থানার প্রবেশের প্রধান ফটকের পাশের শেষ রুমে দুইজন অফিসারকে প্রতিদিন পালাক্রমে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁদের কাজ হচ্ছে সেবা নিতে আসা জনগণের অভিযোগ শোনা, প্রয়োজনে তা কাগজে লিখে নেয়া। প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ ও মামলা লেখা বা অন্তর্ভুক্ত করা।
তবে ইতিপূর্বে থানায় একটি ডায়েরি লিখতে লেখককে ২০০ টাকা দিতে হতো। আবার ওই জিডি অন্তর্ভুক্ত করতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দিতে হতো কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে দালাল ধরে এখন আর কাউকে থানায় আসতে হয়না। বিনা খরচে মানুষ সেবা পাচ্ছে।
জানা গেছে, একটি মোবাইল হারানোর ঘটনার বিষয়ে থানায় জিডি করতে যান রামু চৌমুহনীর রাশেল নামের এক যুবক। কীভাবে লিখবেন বুঝতে পারছিল না। পরে একজন পুলিশেকে ডেকে অভিযোগটি লিখে দিতে বলেন। ওসি সেটি জমা নিলেন। তবে এর বিনিময়ে কোনো টাকা গুনতে হয়নি তাকে। এতোদিন শুনেছিলেন থানায় বা পুলিশ ভিডে, পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করতে টাকা খরচ হতো। এখন কোনো টাকাই লাগে না।
রামু রশিদ নগর মাছুয়াখালীর আমিনা বলেন, থানায় অভিযোগ করার সময় সব ঘটনা খুলে বলি ওসি আবুল মনসুর স্যারকে। এরপর থানার ডিউটিরত একজন পুলিশকে দিয়ে অভিযোগ লিখে জমা করার জন্য বলেন। কোন টাকা চাননি।
ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, সেবা প্রার্থীদের সকল ধরণের সহযোগিতা করার জন্য থানার সকল অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই চেয়ারে বসে মানুষের সেবা করা সম্ভব। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। তার সেবাদানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো রকম অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য ও কাজ বলে তিনি জানান।
এছাড়া জনগণ যেন ২৪ ঘন্টা পুলিশের সেবা পায়, সেজন্য তিনি রামু থানার ১১ টি ইউনিয়নের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওসি এবং ডিউটি অফিসারের মোবাইল নম্বর সম্বলিত লিফলেট লাগিয়েছেন। জরুরী প্রয়োজনে নিজ নিজ এলাকায় বসে মোবাইল ফোনে তথ্য দিয়ে সহজে জনগণ পুলিশের সেবা নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রামু এলাকার সাধারণ জনগনের নিকট এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসিত হয়েছে। ওসি মনসুর যোগদানের পর
পর ঈদগরের ডাকাত আনাইয়া বাহিনীর অবসান,অস্ত্রসহ ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধী গ্রেফতারের হয়েছে। আগের তুলনায় আইন শৃঙ্খলা উন্নত হয়েছে। স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতনতার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধের ওসির পদক্ষেপও বেশ প্রশংসিত হয়েছে।