শহিদুল করিম শহিদ:
সুষ্ট ও নির্বিঘ্নে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মাদকাসক্তির কবল থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে জেলার কয়েকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র। তদ্মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার শহরের আলীরজাহাঁল ফিউচার লাইফ মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে এসব মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। তাই নিরাময় কেন্দ্রগুলোর যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকী প্রয়োজন মনে করছে সচেতন মহল। বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। মাদকের আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে নিবৃত্ত করতে নতুন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যেখানেই মাদক পাওয়া যায় সেখানেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান, সরকার যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এদিকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করার জন্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৌর শহরের আলীর জাহাঁল ফিউচার লাইফ মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্টিত হয় ২০১২ সালে। বর্তমানে এই নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ২৫জন মাদকাসক্ত যুবক। এই নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক জসিম উদ্দিন কাজল মনে করেন, ইচ্ছা করলেই মাদক ছেড়ে দেওয়া সম্ভব বা চাইলেই মাদক মুক্ত হওয়া যায়। এমন ধারণা একেবারেই অমূলক। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে মাদকাসক্তি একটি রোগ, অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে যেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তেমনই মাদকাসক্তি জনিত রোগে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মাদকের চিকিৎসার একটা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। সেই পদ্ধতিতে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার মাধ্যমে মাদকমুক্ত করতে হবে। মাদকের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী, সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। একজন ব্যক্তি যখন মাদকাসক্ত থাকে, তখন সে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, লাভ ক্ষতি বোঝার মতো অবস্থায় থাকে না। মাদক তার মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনা বোধ কেড়ে নেয়। অথবা বুঝতে পারলেও আসক্তির ফলে নির্দিষ্ট সময় মাদক না নেয়ায় যে অসহ্য শারীরিক-মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সে কারনে সে নিজেকে মাদক নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনা। একজন আসক্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন মাদক গ্রহনের ফলে শারীরিক, মানসিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পাশাপাশি তার আচরণিক, আধ্যাত্মিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে, চিন্তা-চেতনার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, ফলে আসক্ত ব্যক্তির জন্য শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি ও আচরণিক, আধ্যাত্মিক ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি চিন্তা-চেতনার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য চিকিৎসা ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আসক্ত ব্যক্তিকে ডিটক্সিফিকেশনের মাধ্যমে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত কাউন্সিলিং, অকুপেশনাল থেরাপি ও সাইকো থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা প্রধান করা হয়। এজন্য একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের এসকল ধাপ সম্পন্ন করতে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ফিউচার লাইফ মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩ থেকে ৪ মাস আবাসিক ভাবে থাকা আবশ্যক। সঠিক চিকিৎসা সেবা পেলে একজন আসক্ত ব্যক্তির পক্ষে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। তবে অসমাপ্ত চিকিৎসা বা সঠিকভাবে পুর্নবাসন ও চিকিৎসা না পেলে পুনরায় মাদক গ্রহনের সম্ভাবনা থেকে যায়। কক্সবাজার জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তারা চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ফলে এসব অঞ্চলের মাদকাসক্তের সংখ্যা কোন অবস্থাতেই কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছেনা। জেলায় দিনদিন মাদকাসক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাদক জনিত অপরাধও বেড়ে চলছে, মাদকাসক্তির ফলে তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, লুঠসহ নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, ফলে দেশের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি হচ্ছে। মাদকজনিত সমস্যার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

মাদকাসক্তদের জন্য সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার জন্য এখনো পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরী না হলেও বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় মাত্র ৩ টি প্রতিষ্টানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ তৈরী হচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন সরকারের বিভিন্ন মহল ও জেলার সুশীল সমাজ। মাদকাসক্তদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই। তাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি পাগল নয়, খারাপও নয়, কিন্তু সে অসুস্থ। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের মতো তারও চিকিৎসার প্রয়োজন, সুস্থ জীবনে ফিরে আসা তার অধিকার। তাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবার সুযোগ তৈরি, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা গ্রহনে আগ্রহী করে তোলা ও তাদেরকে চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসা সরকারের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার ও আমাদের সমাজের সচেতন মহলের সকলের দায়িত্ব । এদিকে জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সুমেন মন্ডল বলেন, বর্তমানে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে। আগামীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লাইসেন্স পাওয়া খুবই কষ্টকর হবে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।