অর্পন বড়ুয়া, কক্সবাজার :
রামুর বৌদ্ধ বিহার-বসতিতে হামলার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। এক সময়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর খ্যাত রামুতে ফিরে এসেছে শান্তি ও সম্প্রীতি। তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে এখনও রয়েছে অসন্তোষ। অপরাধীদের বেশিরভাগ আইনের আওতায় না আসায় শংকা কাটছেনা তাদের।
২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর। উত্তম বড়–য়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে রাতের অন্ধকারে রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর এবং উখিয়া- টেকনাফের ৭টি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। হামলা ও লুটপাট চালানো হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে।
রামুর বাসিন্দা শংকেশ বড়ুয়া ও জয় বড়ুয়া জানিয়েছেন, ঘটনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বিহার ও ঘরবাড়ি পুণনির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ ছয় বছরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অনেকটা ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে রামু সহিংসতার ঘটনা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে
আঘাত হেনেছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে। তবে সম্পূর্ণরুপে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া সময় সাপেক্ষ বলে জানান কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পি.পি এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলার ঘটনায় সর্বমোট ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। তৎমধ্যে বাদীর সম্মতিতে ১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অন্য ১৮টি মামলার মধ্যে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। বিচারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বাকী ৪টি মামলা। তবে সাক্ষীর অভাবে বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে বলে দাবী এই আইনজীবির।
জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, রামু উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৩৭৮ জনসহ ১৪/১৫শ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯টি মামলা দায়ের করা হলেও পরবর্তীতে এসব মামলায় ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানিয়েছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সূত্রিতা, নিরাপত্তাসহ নানা কারনে এসব মামলায় বৌদ্ধরা সাক্ষী দিতে রাজি হচ্ছেন না।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে ও মামলাগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সাক্ষীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
রামু সহিংসতার সাত বছরে এখানে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার পর যেই মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।