ইমাম খাইর, সিবিএন:
এমনিতে কক্সবাজার শহরের সড়কগুলোর নাজুক অবস্থা। দুই পাশে বসেছে অবৈধ ঝুপড়ি দোকান। তার ওপর রিক্সা ও টমটম জট। একসঙ্গে দুইটি ছোট গাড়ি চলতে পারেনা। যানজট একবার লাগলে স্থায়ী থাকে অন্তত আধাঘন্টা। ভোগান্তি আর যন্ত্রণার শেষ নেই শহরবাসীর।
এরই মাঝে দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিতভাবে চলছে মেসার্স কামিনী মোহন রায় প্রকাশ ভোলাবাবুর পেট্রোলপাম্পে গড়ে উঠা অবৈধ সিএনজি স্টেশন। সকাল-সন্ধ্যা এখানে দাঁড়িয়ে থাকে অন্তত ১০০ সিএনজি। দুই লাইনে ভাগ হয়ে চলাচল করে সিএনজিগুলো। এখান থেকে ট্রাফিক পুলিশ ও নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের হাতে যাচ্ছে মাসোহারা।
পেট্রোলপাম্পের পূর্বপাশের সিএনজি উখিয়া, পশ্চিম দিকের সিএনজি যায় ইনানী-সোনারপাড়া। এই দুই লাইনই চলে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। যে কারণে প্রতিদিন যানজট লাগলেও এই অবৈধ ‘সিএনজি স্টেশন’ সরানো যাচ্ছেনা। তাছাড়া এসব সিএনজির কারণে হাসপাতালে যাওয়া গাড়ীগুলোকে অটকা পড়তে হয় অনেক সময়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ২০০৩ সালের দিকে সাবেক এক এমপির বিশেষ অনুরোধে দৈনিক ৫/৭টি করে উখিয়ামুখি সিএনজি দাঁড়ানোর সুযোগ দেয় পেট্রোলপাম্প কর্তৃপক্ষ। সেটি আজ প্রকাশ্য সিএনজি স্টেশনে রূপ নিয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা ওই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন পেট্রোলপাম্পের আশপাশের। বাকি কয়েকজন ইনানী ও উখিয়াকেন্দ্রিক। এরাই নিয়ন্ত্রণ করে টোল আদায় থেকে প্রশাসনের সব ঝাক্কি ঝামেলা।
নাম না ছাপানোর অনুরোধে এক সিএনজি চালক জানিয়েছে, পৌরটোলের নামে সিএনজি প্রতি দৈনিক ২০ টাকা দিতে হয়। মোটা অংকের মাসিক মাসোহারা পৌঁছিয়ে দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উখিয়ার লাইনে প্রায় ১৫০টি আর ইনানীর লাইনে ৭৫টির মতো সিএনজি চলাচল করে। সিএনজি প্রতি কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক হিসেবে ১০০ টাকা করে ‘মাসোহারা’ দিতে হয়। অন্যথায় ট্রাফিক আইনের ১৫১ ধারায় শাস্তির হুমকি আসে।
ভোলা বাবুর পেট্রোলপাম্পের নির্বাহী পরিচালক উত্তম কুমার দাশ সিবিএনকে জানান, এক সময় তাদের কাছ থেকে অনেক বড় গাড়ি তেল নিয়ে যেত। কিন্তু যানজটের কারণে সেই নামিদামি কাস্টমারগুলো তারা হারিয়ে ফেলেছে। প্রবেশমুখে সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট বাঁধে। এলোমেলো সিএনজির কারণে তেল নিতে আসা গাড়ি ঢুকতে পারেনা। ঢুকলে বের হওয়া দায়। সিএনজিগুলো সরিয়ে দিলে আবারো চলে আসে সেই আগের জায়গায়। তিনটি শক্তির কাছে তারা অসহায় বলেও জানান উত্তম কুমার দাশ। তিনি সিএনজিগুলো সরিয়ে নিতে পৌর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান সিবিএনকে বলেন, কক্সবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোথায় কি কারণে যানজট- তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। শহরের ভেতরে এভাবে অবৈধ সিএনজি স্টেশন গড়ে ওঠা উচিত হয়নি। অঘোষিত এই সিএনজি স্টেশন তুলে দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মেয়র মুজিব।

নোটঃ
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশকে কি পরিমাণ মাসোহারা দিতে হয়? মাসোহারার টাকা কে আদায় করে? সিএনজি চালকরা কতদিন ধরে সেই মাসোহারা দিয়ে আসছে? তা পরবর্তী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে।