মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :


ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থানরত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের মামলার রায় ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রদান করা হবে। ভারতের বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ইষ্ট খাসিয়া হিল জজ কোর্টে এই মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মিঃ ডিজি খার সিং এ রায় প্রদান করবেন। উল্লেখ্য, ভারতে সাপ্তাহিক সরকারী ছুটির দিন রোববার হওয়ায় শুক্রবার অফিস আদালত স্বাভাবিকভাবে খোলা থাকে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসাবে সফলভাবে দায়িত্বপালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকাস্থ উত্তরার একটি বাড়ী থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী অপহরনকারীরা সালাহউদ্দিন আহমদকে গুপ্ত স্থানে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমদকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সিলং শহরে গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে শিলং মানসিক হাসপাতালে, পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেঘালয় পুলিশ ভারতে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনে সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠানো হয়। পরে শিলং আদালত থেকে শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে বিজ্ঞ আদালত সালাহউদ্দিন আহমদকে জামিন প্রদান করেন। তখন থেকে নির্বাসিত অবস্থায় দীর্ঘ ৩ বছর সাড়ে ৪ মাস ধরে খাসিয়া খ্রীষ্টান অধ্যূষিত এলাকা শিলং শহরে সানরাইজ গেষ্ট হাউজ নামক একটি দোতলা ভাড়া বাড়ীতে তিনি বসবাস করে মামলা পরিচালনা করে আসছেন। মামলা দায়েরের পর মেঘালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। সালাহউদ্দিন আহামদের কৌশুলী ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী এস পি মোহন্ত জানান, প্রায় ৬ মাস আগে মামলার সাক্ষী, জেরা, শুনানী, যুক্তিতর্ক সহ সব ধরনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ স্বেচ্চায় ভারতে অনুপ্রবেশ করেননি, তাঁকে অপহরনকারীরা জোর করে চোখ বাঁধা অবস্থায় এখানে এনে রেখে দিয়েছে, সেটা আদালতে সালাহউদ্দিন আহমদের আইনজীরীরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন। মিঃ এসপি মোহন্ত জানান, মামলা শুনানীর সময় আদালতে তাঁরা এ সংক্রান্ত জাতি সংঘের কার্যবিবরনী, আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্ট, আ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট, যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের আর্লিডে মোশান, ভারতের উচ্চ আদালতের রেফারেন্স, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের আদেশ সহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন আইন ও নজীর আদালতে উপস্থাপন করে আদলতকে সন্তুষ্ট করেছেন। এমনকি মেঘালয়ের একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা স্বয়ং তাঁর সাক্ষ্যদানকালে সালাহউদ্দিন আহমদ একজন সাবেক মন্ত্রী, তিনি কখোনই ভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ করার লোক নয় বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় তথ্য উপাত্ত ও আইনী যুক্তি উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আইনজীবী মিঃ এসপি মোহন্তের দৃঢ় বিশ্বাস, এ মামলায় সালাহউদ্দিন আহমদ বেকসুর খালাস পাবেন। মামলাটির চুড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর রায় প্রচার পর পর ৪ ধার্য তারিখ পিছিয়েছে। যা এজাতীয় মামলার রায় প্রদানে এত দীর্ঘ বিলম্ব হওয়া, খুবই বিরল ঘটনা বলে তিনি জানান।
এদিকে, সালাহউদ্দিন আহমদের প্রেস সচিব মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হেলালী জানান, মামলাটি নিষ্পত্তি করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। হেলালী জানান, শিলং এর আদলতে ন্যয়, নিরপেক্ষ ও সুষ্ট বিচারের ব্যাপারে সালাহউদ্দিন আহমদ খুবই ইতিবাচক ধারণা পোষন করছেন। তাই শিলং আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পেয়ে শীঘ্রই মুক্ত হবেন দৃঢ় আশাবাদী। তিনি দেশবাসীর কাছে এজন্য আন্তরিকভাবে দোয়া ছেয়েছেন।