সৈয়দ শাকিল


কতিপয় পুলিশের নানা অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপের কারনে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত পুলিশদের নিয়ে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতীতে ইয়াবা ব্যবসা, ঘুষ গ্রহন, জিম্মি করে মুক্তিপন আদায় ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়া সহ নানা কারণে কক্সবাজারে সমালোচিত হতে হয়েছে এই বাহিনীকে। আলোচনার চেয়ে বছরের বেশীরভাগ সময় সমালোচনায় থাকা এই বাহিনীকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলে কক্সবাজার জেলাকে ইয়াবা ও অপরাধমুক্ত করতে নানা উদ্দ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানালেন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য যোগদানকারী ইকবাল হোসাইন। একান্ত সাক্ষাত কালে ইকবাল হোসাইন তার ব্যক্তিগত, কর্মজীবন ও কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সেই সাক্ষাতকারটি দুই পর্বে প্রকাশিত হবে। আজ থাকছে তার প্রথম পর্ব। সাক্ষাতকারের শুরুতেই তিনি তার পরিবার ও শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে প্রতিবেদকের সাথে আলোচনার চুম্বাকাংশ তুলে ধরা হল-
১৯৮১ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি নরসিংদী জেলার মনোহরদীর পিরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাষ্টার ও সুফিয়া শওকতের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। সময়ের পরিক্রমায় তিনিই আজ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন। ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে। পরে ২০০৮ সালে ২৭ তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে মানব সেবার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন । চাকরি জীবনে ঢাকা মেট্টোপলিটন, এয়ারপোর্ট, সিলেট মেট্টোপলিটন এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মালি মিশনে অংশগ্রহণ করেন। শান্তিরক্ষা মিশন শেষে দেশে ফিরে ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান। দাম্পত্য জীবনে চিকিৎসক স্ত্রী সহ এক ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে ।
কক্সবাজারকে নিয়ে পরিকল্পনার কথা বলেন ইকবাল হোসাইন:
কক্সবাজার ইয়াবা, মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি সহ অপরাধ মুক্ত করতে আমার কিছু বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। অপরাধী পরিচয়ের কথা চিন্তা না করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। অপরাধীদের সাথে আপোষ না করা। পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলাই আমার পরিকল্পনার একটি বিশেষ অংশ।
প্রশ্ন: অতীতে অনেক পুলিশের সাথে মাদককারবারীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে মাদক নির্মূলে আপনার ভুমিকা কি হবে?
ইকবাল হোসাইন: দেখুন শুধু পুলিশ কেন প্রতিটি সেক্টরেই কিছু অসাধু লোকজন থাকে । আপনাদেরে কাছে যদি বর্তমানে কক্সবাজার পুলিশে কর্মরত কোন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে সে তথ্য আমাকে দিন। কথা দিচ্ছি তথ্য সঠিক হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব। আমাকে অল্প সময় দিন। এই সময়ের মধ্যেই মাদক অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চেষ্টার কমতি থাকবে না।
জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে জেলা পুলিশকে গড়ে তুলার বিষয়ে ইকবাল হোসাইন বলেন, পুলিশ জনগনের সেবক। কক্সবাজারের সাধারন মানুষের জন্য আমার মুঠোফোন নম্বরটি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। যেকোন সময় যেকোন মুহুর্তে সাধারন মানুষের সেবায় আমি নিয়োজিত থাকব।
সীমাবদ্ধতার বিষয়ে ইকবাল হোসাইন বলেন : পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিকন্ধকতা হচ্ছে রাজনৈতিক তদবীর। একজন অপরাধীকে ধরতে যত মানুষ সহযোগীতা করে তারচেয়েও বেশী ক্ষমতাবান লোক অপরাধীকে ছাড়াতে তদবীর করে। এসব সীমাবদ্ধতা পাশ কাটিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
মানুষের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে অনেক গৌরব উজ্জ্বল সাফল্য। দেশের নিপিড়িত, নির্যাতিত মানুষ সর্বপ্রথমেই পুলিশের দারস্থ হন। কার্যক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীর চাপ কিংবা বাড়তি সুবিধা নেওয়ার কারণে অসহায় ওই মানুষগুলো অনেক সময় পুলিশের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়। এতে একদিকে যেমন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ব্যহত হয় তেমনি ন্যায় বিচার না পেয়ে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি হয়।
সবমিলিয়ে পুলিশের কতিপয় সদস্য যেমন সুনাম ক্ষুণ্য করছে তেমনি এ বাহিনির ভাল কাজের দৃষ্টান্ত কম নয়। সেবার ব্রত নিয়ে দেশ এবং জনগণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছেন। এ ধরণের কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের কারণে জনগণ পুলিশকে পরমবন্ধু হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকেন।
জেলাবাসীর পুলিশ কিংবা অপরাধীদারা কোন অন্যায় বা অবিচার হয় তাহলে সাথে সাথে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যে কোন ব্যক্তি আমার অফিসে এসে অভিযোগ বা তথ্য দিতে পারবেন। তা ছাড়া আমার মোবাইল ফোন (০১৭১৩৩৭৩৬৫৮) সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। যথাযথ সগযোগিতায় সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ উপহার দিতে চাই।

চলবে …..