মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

অন্তর্বিহীন মৌননিস্তব্ধ সৌন্দর্য। দিগন্ত বিস্তৃত গ্রন্থিল পাহাড়। সর্পিল বেগে বয়ে চলছে খর¯্রােতা মাতামুহুরী আর চারপাশে সবুজাভ প্রকৃতি। এমন মনোমুগ্ধকর চিরহরিৎ পরিবেশে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় নির্মিত হয়েছে শৈলকুঠি রিসোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) এ রিসোর্টে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

আশির দশকে মানোন্নীত থানা হয় আলীকদম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত আলীকদমে এতদিন ছিল না কোন আবাসিক হোটেল কিংবা রিসোর্ট। তাই কয়েকজন মিলে উদ্যোগী হয়েছেন আলীকদমকে পর্যটকবান্ধব করতে। ব্যয়বহুল এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধি। উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘেরা ওয়াইহ্লা কার্বারী পাড়া ও বণিক পাড়া সন্নিহিত মাতামুহুরী নদীর কুলঘেঁষে পাহাড়ের ঢালে মনোরম পরিবেশে নির্মাণ হচ্ছে শৈলকুঠি। অবকাশ যাপনের সুবিধার পাশাপাশি আলীকদমে পর্যটন শিল্পের বিকাশে রিসোর্ট অনন্য অবদান রাখবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথ আলীকদম-থানচি সড়কের প্রায় মাঝামাঝি পয়েন্টে সুউচ্চ ডিম পাহাড়। হাজার বছরের বিস্ময়কর ঐতিহাসিক নিদর্শন আলীর সুড়ঙ্গ, সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত হয়েছে দামতোয়া ঝর্না, রূপমুহুরী ঝর্না, নুনার ঝিরি ঝর্না এবং তামংঝিরি জলপ্রপাত। এর বাইরে রংরং চাইম্প্রা ফলস্, তামাংঝিরি জলপ্রপাত এবং মারাইংতং পাহাড়। কিন্তু এতো এতো পর্যটন সম্ভাবনাময় আলীকদমে এতদিন ধরে ছিল না বেসরকারি হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। উপজেলা পর্যায়ের গেস্টহাউসগুলোও এখন ব্যবহার হচ্ছে অন্যকাজে। পর্যটকদের সেখানে থাকার সুবিধা নেই। তাই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অবকাশ যাপনের কোনো উপায় ছিল না এতদিন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলকুঠি রিসোর্টের জন্য নির্বাচিত স্থানটি খর¯্রােতা মাতামুহুরীর তীর ঘেঁষে একটি পাহাড়। এখান থেকে দেখা যায় দিগন্ত বিস্তৃত গ্রন্থিল পাহাড় আর মাতামুহুরী নদীর পাশে সবুজাভ বন। রিসোর্ট এলাকাটি মার্মা ও বাঙ্গালী বসতির মাঝামাঝি স্থানে। যেখানে বিরাজ করে পাহাড়ি-বাঙ্গালীর বর্ণিল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আবহ।

রিসোর্টের উদ্যোক্তাদের একজন আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ জানান, আলীকদমে এ পর্যন্ত কোন আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেনি। সরকারিভাবে রেস্ট হাউজ সুবিধাও তেমন নেই। তাই আমরা পর্যটকদের কথা বিবেচনায় রেখে রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি। পরিকল্পনামতে অগ্রসর হতে পারলে ঈদের আগেই ঝমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শৈলকুঠির রিসোর্টের উদ্বোধন করা হবে। এরপর সর্বসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হবে। বিশেষ করে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আমাদের রিসোর্ট থেকে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

শৈলকুঠির রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাংবাদিক আল-ফয়সাল বিকাশ জানান, ‘আলীকদম উপজেলার ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের এ রিসোর্টের নামকরণ করা হয়েছিল ‘এংখ্যং রিসোর্ট’। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নামকরণ পাল্টে নতুন নামকরণের প্রস্তাব আসায় লটারীর মাধ্যমে ‘শৈলকুঠি রিসোর্ট’ নামকরণ করা হয়। আগামী ঈদের আগে রিসোর্টের ৩টি কটেজ ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে কটেজের সংখ্যা’। ইতোমধ্যে রিসোর্টের আভ্যান্তরীণ রাস্তা ও বিনোদনস্পটগুলো তৈরী করা হয়েছে।

অন্যদিকে বান্দরবান জেলা সদর থেকে থানচি পৌঁছে সেখান থেকে ভাড়ায়চালিত গাড়ি বা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথ বেয়ে সোজা আলীকদম বাজার। সেখান থেকেও রিকশা বা অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে রিসোর্টে যাওয়া যায়। আলীকদম বাসস্টেশন অথবা বাজার থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই এ রিসোর্টের অবস্থান।

কীভাবে যাবেন : ঢাকা, চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে শৈলকুঠিরে আসতে হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পয়েন্টে নামতে হবে। সেখান থেকে বাস অথব জিপে চলে আসতে হবে আলীকদম বাসস্টেশনে। সেখান থেকে রিকশা অথবা অটোরিকশা নিয়ে নয়াপাড়ায় পৌঁছুলেই শৈলকুঠির রিসোর্ট আপনাকে স্বাগত জানাবে।

খরচ যা পড়বেঃ রিসোর্টে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসন। একেকটি কটেজের প্রতিরাতের জন্য ভাড়া পড়বে ৩ হাজার টাকা (নন এসি)। এছাড়া রিসোর্টের অন্তর্ভূক্ত রেস্টুরেন্টে খাবারের ব্যবস্থা থাকছে পর্যটকদের জন্য।

ছবির ক্যাপশান: আলীকদমকে পর্যটনবান্ধব করতে নির্মিত হয়েছে শৈলকুঠি রিসোর্ট।