বার্তা পরিবেশক :

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেছেন, মহাত্মা আহমদ ছফা ছিলেন, বাংলা ভাষার একজন শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক। তিনি ছিলেন, ‘সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং আদর্শনিষ্ঠ ও প্রগতিপন্থি একজন সংস্কৃতিকর্মী।’ ‘ছফার লেখালেখিতে, তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় বর্তমানময়তা আছে, আছে ইতিহাসের পরিচ্ছন্নতা। তৃতীয় উপাদান গণমানুষের প্রতি অঙ্গীকার, এবং তা রাজনৈতিক অর্থে। ছফা ছিলের অসীম সাহসী। তাঁর ক্ষেত্রে এ সাহস এসেছে ইতিহাসবোধ থেকে, অঙ্গীকার থেকে।

বক্তাগণ বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মতে, ছফার রচনাবলি গুপ্তধনের খনি এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম স্বকীয় এক জগতের সৃষ্টি করে যে জগতে যে কোনো পাঠক হারিয়ে যেতে পারে। হুমায়ুন আহমদ আহমদ ছফাকে ‘অসম্ভব শক্তিধর একজন লেখক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তাঁকে নিজের মেন্টর বলে উল্লেখ করেছেন।

একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি আরো বলেন, আমার বাল্যবন্ধু ডা. কবীর আহমদ সেই প্রাথমিক শিক্ষা জীবন থেকেই পরোপকারী ছিলেন। যার ফলে তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে মানসেবায় নেমে পড়েন। মানবসেবার জন্যই তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য নিজস্ব চেম্বার নিয়ে বসেন। তিনি ছিলেন কক্সবাজারের হোমিও চিকিৎসায় প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব। তিনি বিনি পয়সায় অনেক দুঃস্থ রোগীর চিকিৎসা দিতেন। তিনি কক্সবাজারে হোমিও চিকিৎসার একটি বিভিন্ন তৈরি করে দিয়ে গেছেন।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪২১তম সাহিত্য সভায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন। ৬ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সভায় সভাপতিত্ব করে একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম। সভায় মহাত্ম আহমদ ছফার নাতিদীর্ঘ জীবনালেখ্য পাঠ করেন সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল।

বক্তাগণ আরো বলেন, আহমদ ছফা দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবারিয়া তেকে সুদূর রাজধানী ঢাকা গিযে তার নিজ গুণে একটি স্থায়ী আসন গেড়ে নিয়েছে। বাংলা সাহিত্যে একটি ঝাকুনি দিয়েছেন। গ্রামের একজন কৃষকের সন্তান হয়ে সংবাদপত্রের হকার হিসেবে রোজগার করে নিজের শিক্ষার ব্যয় নিজেই বহন করেছেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য এবং বলয় সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তিনি রাষ্ট্র তাকে বুঝতে পারেনি। তারেক যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। বক্তাগণ আরো বলেন, আহমদ ছফাকে জানতে হলে তাকে বার বার পড়তে হবে, তাকে চর্চা করতে হবে।

একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক প-িত মহাত্ম আহমদ ছফা সম্পর্কে আলোচনা করেন একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান কবি সুলতান আহমদ, মূল্যায়ন সম্পাদক কবি অমিত চৌধুরী, স্থায়ী পরিষদের সদস্য গবেষক নূরুল আজিজ চৌধুরী, স্থায়ী পরিষদের সদস্য ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কবি-অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী, একাডেমীর জীবন সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম, একাডেমীর সহ-সভাপতি কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছড়াকার মো. নাছির উদ্দিন, সদস্য এডভোকেট নুরুল হক ও নির্বাহী সদস্য আবৃতিকার কল্লোল দে চৌধুরী।

কবিতা পাঠ করেন যথাক্রমে কবি অমিত চৌধুরী, কবি রুহুল কাদের বাবুল, দিলওয়ার চৌধুরী, কল্লোল দে চৌধুরী ও মো. আরিফ উল্লাহ।

সভায় একাডেমীর নির্বাহী সদস্য শিক্ষাবিদ রাজ বিহারী চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। তার আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। বাদ মাগরিব একাডেমীর স্থায়ী পরিষদ সদস্য ও রামু কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ শারমিনা আফরোজ রেশমিনের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। উল্লেখ্য, ২ জুলাই ছিলো রেশমিনের মৃত্যু বার্ষিকী। মুনাজাত পরিচালনা করেন বদরখালী ইসলামীয়া মাদরাসার প্রভাষক ও শহরের আলীফ-লাম-মীম জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মো. আরিফ উল্লাহ।

সাহিত্য একাডেমীর ৪২২তম সাহিত্য সভা ১৩ জুলাই

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪২২তম সাহিত্য সভা আগামী ১৩ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সাহিত্য সভায় একাডেমীর নির্বাহী কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ বাবু রাজবিহারী চৌধুরীর জীবনালেখ্য আলোচনা করা হবে।

অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।