ডেস্ক নিউজ:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা দুটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অনেক বিষয়ই তুলে ধরেছেন ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশী নেতারা। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশী ৩২৩ জনের মাঝে ২৫০ জনের কথা শুনেছেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশীদের নেতা হিসেবে কোনো পছন্দের নাম থাকলে প্রস্তাব করতে বলেন। এ সময় সকল ছাত্রলীগ নেতা সমস্বরে বলেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। জবাবে শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছেন, আমি যে সিদ্ধান্ত দেব তোমরা মেনে নেবে? নেতারা পুনরায় জানান, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, চূড়ান্ত।

সভায় উপস্থিত নেতাদের ভাষ্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৮টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক ১১টার পরও চলে। ছাত্রলীগের নেতারা তাদের বক্তব্যে সংগঠনের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বর্তমান নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়েই বেশি কথা বলেছেন। কথা বলতে গিয়ে নিজেদের মাঝে মাইক কাড়াকাড়ির ঘটনায়ও জড়িয়ে পড়েন পদ-প্রত্যাশীরা।

নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রশ্ন করেছিলেন পদ-প্রত্যাশীদের কাছে। একটি হচ্ছে এত প্রার্থী কেন? অপরটি হচ্ছে, তুমি প্রার্থী কেন?

পদ-প্রত্যাশীরা জানান, এই দুই প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের নেতারা বিভিন্ন বিষয় তুলে আনেন নিজেদের কথায়। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগকে পরিচালিত করে আসা সংগঠনের সাবেক নেতাদের ভূমিকা, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া, নেতৃত্বের ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে পদ-প্রত্যাশীদের বক্তব্যে।

একটি জেলার সভাপতি ও পদ-প্রত্যাশী তার বক্তব্যে বলেন, আমি একটা কলেজের সভাপতি ছিলাম, জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে আছি। আমার কলেজে কোটা আন্দোলনকারীদের আমরা শক্তহাতে প্রতিহত করেছি। কিন্তু সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ব্যর্থ। বারবার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এটা হচ্ছে।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাথা নাড়েন। অনুষ্ঠান শেষে খাবারের জন্য নির্ধারিত স্থানে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওই নেতার ওপর ঝাপিয়ে পড়েন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এদের অধিকাংশ ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির শীর্ষ দুই পদের একজনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির এক সহ-সভাপতি বলেন, সরকারি চাকরিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে বারবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। দুর্বল নেতৃত্বের জন্যই এ অবস্থা। আপনি দায়িত্ব নিলে যারা ১/১১ এর সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাজপথে রাজনীতি করেছে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এ সময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির এক শীর্ষ নেতা সবার সামনেই ওই সহ-সভাপতির উদ্দেশে তেড়ে যান, তখন সকলে মিলে শান্ত করেন তাকে।

ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য শুনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় বলেন, ছাত্রলীগ তো আওয়ামী লীগের চেয়েও সিনিয়র সংগঠন। দীর্ঘদিন থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে আসছি। কিন্তু এই ৩২৩ জন পদপ্রার্থীর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে সাধারণত ৩ থেকে ৪/৫ জন প্রার্থী দেখে এসেছি আমরা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তোমরা এখানে অনেকজন। কিন্তু নেতা হবে মাত্র দু’জন। তোমাদের কোনো আপত্তি আছে? জানতে চাইলে সকলে সম্মিলিত সুরে বলে ওঠে, ‘শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত চূড়ান্ত’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সেই সকাল ৯টায় ফাইল দেখা শুরু করেছি তারপর আবার সংসদে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট প্রশ্ন-উত্তর পর্বে বক্তব্য রেখেছি এরপর এখানে এসেছি। তোমরা হয়তো ৭০/৮০ জন কথা বলার সুযোগ পাও নাই সময় স্বল্পতার জন্য। তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা আছে, আমাকে বারবার বলা হচ্ছে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আমি চেয়েছিলাম তোমরা গরম গরম খেয়ে যাবে, এখন তোমরা খাবার খেয়ে যেতে পারো না হয় নিয়েও যেতে পারো। এটাতো গণভবন, তোমাদেরই গণভবন।’

এ সময় কমিটি গঠনের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে একটি খাম থেকে ফাইল বের করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইগুলো দেখতে অনেক সময় লাগবে।