কে এম জাহিদুজ্জামান

‘‘কক্সবাজারের একটি মাকেও যেন বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে অনাকাংখিতভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়” এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফ্তিখার মাহমুদ, এমডি। তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যু কমাতে হলে প্রথমত: জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে অবশ্যই গর্ভবতী মা প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসে। আর এই জনসচেতনতা বাড়াতে সংবাদ-মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমেরিকা প্রবাসী ডা. ইফ্তিখার তার অক্লান্ত শ্রম ও মেধার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যয়ে ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চেইন্দা নামক স্থানে ‘হোপ হসপিটাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ৪০ শষ্যাবিশিষ্ট হসপিটালটি শুরু থেকেই যথেষ্ট সুনামের সহিত স্বল্পমূল্যে এবং বিনামূল্যে মায়েদের, নবজাতকের ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে। প্রতি বছর এই হসপিটালটি গড়ে এগার হাজার মহিলা এবং ছয় হাজার নবজাতক ও শিশু চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। এখানে উল্লেখ্য যে, হোপ হসপিটালটি ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন অব বাংলাদেশ’ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার মা বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে মারা যায়, যা খুবই দুঃখজনক। যদিও এই সংখ্যা আশির দশকে ছিল প্রতি এক লাখে প্রায় পোনে ছয়শত, বর্তমানে তা যথেষ্ট কমে প্রতি লাখে ১৭৬ এ এসে দাড়িয়েছে (সূত্র: প্রথম আলো, ২৫ জুন ২০১৮)। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার অগ্রগতিতে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে ৭০ বা তার কমে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমুহ (SDGs) অর্জিত হয়। সরকারের এই সকল কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন অব বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক এর আর্থিক সহায়তায় হোপ ফাউন্ডেশন কক্সবাজার সদর উপজেলা ও রামু উপজেলায় মোট পাঁচটি হোপ বার্থ সেন্টার চালু করেছে, যেখানে দক্ষ প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের দ্বারা গর্ভবতী, নরমাল ডেলিভারী, প্রসুতি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হোপ বার্থ সেন্টারসমুহ হলো- ভারুয়াখালী বার্থ সেন্টার, পোকখালী বার্থ সেন্টার, ঈদগড় বার্থ সেন্টার, ইসলামপুর বার্থ সেন্টার এবং খুনিয়াপালং বার্থ সেন্টার, যেখান থেকে ২৪/৭ স্বল্পমূল্যে এবং বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই উক্ত এলাকাসমুহে যথেষ্ট সাড়া পড়ে গেছে এবং প্রতিদিন অনেক মায়েরা এসে সেবা নিয়ে যাচ্ছে। তবে খুব শীগ্রই হোপ ফাউন্ডেশন সদর উপজেলার খুরুশকূল, সমিতিপাড়া ও ঈদগাঁহ এলাকার হোপ মেডিকেল সেন্টারসমুহ বার্থ সেন্টারের রূপান্তরের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ জনগন এবং সংবাদ-মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে তবেই কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু, নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
{হোপ বার্থ সেন্টার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে লিখুন: coohopef@gmail.com}

লেখক: কে এম জাহিদুজ্জামান, সিওও, হোপ ফাউন্ডেশন।