বিশেষ প্রতিবেদক: 

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ১১ লক্ষ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন করেছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এত ব্যাপক জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন বড়ই চ্যালেঞ্জিং ছিল, যা সরকার সাফল্যজনকভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা যেহেতু মানুষের মৌলিক আধিকার আর তা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়। মানবিকতা সবার উর্দ্ধে আর তাই রোহিঙ্গা শরণার্থী আবাসন নিশ্চিত করতে গিয়েই কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার গহীন বনাঞ্চলের প্রচুর গাছপালা কেটে ফেলতে হয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য বড়ই হুমকীস্বরূপ।

পরিবেশের এই ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন অব বাংলাদেশ’ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হোপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে এমন প্রায় ২০০০ গাছের চারা মধুছড়া’র ‘হোপ ফিল্ড হাসপাতাল ফর উইমেন’ ক্যাম্পাসে এবং এর সংলগ্ন এলাকায় রোপণ করেছে। হোপ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্টি ডিরেক্টর এস এম ফেরদৌসুজ্জামান এর নেতৃত্বে ‘বৃক্ষ ৫০০০’ (ঞজঊঊ ৫০০০) নামক হোপ বৃক্ষরোপন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, চিকিৎসা বঞ্চিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থার পাশাপাশি ‘হোপ ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশ সরকার, ইউএনএফপিএ, এভরি মাদার কাউন্টস্-এর আর্থিক সহায়তায় শরণার্থী পূর্নবাসনের শুরু থেকেই মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশন সাতটি সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তিনটি অস্থায়ী হোপ স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং মধুছড়ায় একটি হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন এ (রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মধ্যস্থলে অবস্থিত একমাত্র ফিল্ড হসপিটাল) দিবা এবং রাত্রী ২৪ ঘন্টাই চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।

স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার অঙ্গীকার নিয়েই হোপ ফাউন্ডেশন সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় এই ধরনের একটি সামাজিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফ্তিখার মাহমুদ, এমডি বলেন, আমরা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কথা মাথায় রেখেই এই ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। হোপ ফাউন্ডেশন কর্তৃক রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় পরিচালিত সাতটি সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তিনটি অস্থায়ী হোপ স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং মধুছড়ার স্থায়ী হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন এর ক্যাম্পাস এবং হসপিটাল সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালে এই বর্ষা মওসুমেই মোট ১৫০০০ বৃক্ষরোপণ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ করেন। ডা. মাহমুদ আরো বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা বজায় রাখার স্বার্থেই দেশী-বিদেশী প্রতিটি সংস্থা, স্থানীয় জনগন ও সমাজের বিত্তবানদের রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীতে এগিয়ে আসা উচিত। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বসবাসের জন্য ছায়াঘেরা পরিবেশ নিশ্চিত হবে।