ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:

সমুদ্রের জোয়ারভাটার বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগর উপকূলের উজানটিয়া ইউনিয়নের ১৫ হাজার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের কারণে টানা প্রবল বর্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। গত ১২জুন রাতের জোয়ারে ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে প্রায় ১৫চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে লোকালয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করে। সেসময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত অন্তত ১০দিন পানিবন্দী রয়েছে ইউনিয়নের ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ। এ নাতিদীর্ঘ সময়ে মানবিক বিপর্যয় দেয়া দিয়ে ইউনিয়ন জুড়ে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব।

উজানটিয়া ইউনিয়নের নুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, পানিবন্দী হয়ে সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ত্রাণ বিতরণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের অনিয়ম, অদূরদর্শীতা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়নের নুরী পাড়া, মালেক পাড়া, রূপালী বাজার, সুতাচুরা, ভেলুয়া পাড়া, ফকির পাড়া, জলিল উদ্দিন পাড়া, মিয়াজি পাড়া, পশ্চিম উজানটিয়া পাড়া, ফেরাসিংগা পাড়া, ঘোষাল পাড়া, মিয়া পাড়া, পেকুয়ার চর, আতর আলী পাড়া ও ঠান্ডার পাড়া এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। সাগরের পানিতে তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের। এতে থমকে গেছে ইউনিয়নবাসীর জনজীবন।

এছাড়া একই ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে লোকালয়ে অব্যাহত রয়েছে জোয়ারভাটা। এলাকার রাস্তাঘাট ও গ্রামীন বিভিন্ন অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জয়নাল হাজারী বলেন, অসাধু মৎস্যচাষিরা বেড়িবাঁধ কেটে অপরিকল্পিতভাবে আর.সি.সি পাইপ বসিয়ে চিংড়ী ঘেরে পানি প্রবেশপথ সৃষ্টি করায় বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এব্যাপারে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই ইউনিয়নবাসীর এ দূর্দশা।

উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ৮টি ওয়ার্ডে সাগরের প্রতি জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে আর ভাটায় বের হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার  দুপুরে ও তার আগেরদিন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সমূহের সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।