এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :

চকরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে নেমেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। রোববার ভোরে সেহেরির পর থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত গত সোমবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ার ফলে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত ও গ্রামীন সড়ক-উপসড়ক। ডুবে গেছে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সড়ক। গতকাল দুপুরে থানার সামনে ও উঠানে হাটু সমান পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। বেড়ে চলছে জনদুর্ভোগ।

চকরিয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র বশিরুল আইয়ুব বলেন, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকালের দিকে পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের মজিদিয়া মাদরাসা পাড়া, ভাঙ্গারমুখ, দিগরপান খালী, এক নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া, ছাবেত পাড়া, কাজীর পাড়া, ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাটাখালী সেতুর পাশের কয়েকটি গ্রামের অন্তত শতাধিক বসতঘর পানিতে ডুবে গেছে। এতে জনসাধারণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, দুইদিনের ভারী বর্ষণে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ নীচু এলাকা রোববার থেকে পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে আভ্যন্তরিক বেশ কটি সড়ক। ছিকলঘাট-কাকারা-মাঝেরফাড়ি সড়কের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুইদিন ধরে কাকারা বারআউলিয়া নগর গ্রামের অন্তত ৬ হাজার মানুষ চলাচলের মাধ্যম হিসেবে কলা গাছের ভেলা ব্যবহার করছেন। চলাচলে দুর্ভোগের রয়েছে স্কুল কলেজ মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরা।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে বিভিন্ন শাখাখাল ও স্লইচ গিয়ে দিয়ে তাদের লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে নদীর পানি। গতকাল সকাল থেকে পানির প্রবল ¯্রােত পড়েছে লোকালয়ের নীচু এলাকা গুলোতে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে ঢলের পানি গতি বাড়বে। এতে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করবে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানিয়েছেন, ঢলের প্রভাবে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পহরচাঁদা অংশে বেড়িবাঁেধর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি। গতকালও ইউনিয়নের বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার বলেন, ভারী বর্ষণে রোববার থেকে তার ইউনিয়নের নীচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে চকরিয়া সরকারি কলেজ, আমজাদিয়া মাদরাসা হাটু সমান পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন বলেন, বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি মাতামুহুরী নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নে নদীর তীর এলাকায় ভাঙ্গনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ১৫-২০টি বসতঘর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, টানা ভারী বর্ষণের কারনে রোববার সকালে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পানির প্রবল ¯্রােতে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। দুইদিনের ভারী বর্ষণে ও নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারনে ইউনিয়নের নদীর তীর এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগে রয়েছে।