বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার রেডক্রিসেন্টর তিন কর্মকর্তার ‘অপকর্ম’ নিয়ে লিফলেট বিলি ও এমআরআরও প্রকল্পে দুর্নীতির ঘটনায় রেডক্রিসেন্ট’র হাইকমান্ড থেকে তদন্ত করা হয়েছে। গত ৩, ৪ ও ৫ জুন এই তদন্ত হয়ে গেছে। তবে এই তদন্ত নিয়ে বিতর্ক ও কঠোর সমালোনা চলছে। কেননা তদন্ত কমিটির প্রধান রেডক্রিসেন্টর জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ চৌধুরীকে ছাড়াই তদন্ত শেষ করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা তদন্ত দলের সদস্যরা। তাই এই তদন্তকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ চৌধুরী।

কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেন মোস্তফা কামাল জানান, কক্সবাজার রেডক্রিসেন্টর তিন কর্মকর্তা নাজমুল আজম খান, একরাম এলাহী ও সেলিম আহামদ’র ‘অপকর্ম’ নিয়ে সম্প্রতি লিফলেট বিলি ও এমআরআরও প্রকেল্পর অনিয়মের ঘটনায় কেন্দ্র থেকে তদন্ত করা উদ্যোগ নেয়। এই জন্য রেডক্রিসেন্ট কক্সবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টর সোসাইটির যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদকে সদস্য সচিব এবং বান্দরবান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি একেএম জাহাঙ্গীর ও চট্টগ্রাম রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যকরী সদস্য এইচ.এম সালাহ উদ্দীনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রমজান মাস হওয়ায় সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্তের জন্য আহ্বায়ক মোস্তাক আহামদ ঈদের পরে আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুন তদন্তের সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু সদস্য সচিব শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদ আহ্বায়কের কথা অমান্য করে গত ২, ৩, ৫ জুন তদন্ত করতে আসে। তারা আহ্বায়ক মোস্তকা আহামদ চৌধুরীকে ছাড়াই তদন্ত চালায়। পরে তারা মোস্তাক আহামদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ না করেই কক্সবাজার ত্যাগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহ্বায়ককে ছাড়াই তদন্ত করলেও তা যথাযথভাবে করেনি তদন্ত কমিটি। তারা যেনতেন ভাবে নামমাত্র কিছু হালকা তথ্য খোঁজ করেছেন। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলেও তারা নির্দিষ্ট অভিযোগের কিছুই খোঁজ নেয়নি। উপরন্তু তদন্তকালে অভিযুক্তদের সাথে গাল-গল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাদের। অন্যদিকে মাঠ যাচাই না করে সংবাদ মাধ্যমকে অযৌক্তিক জেরা করেছেন। এই নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন লোক দেখানো তদন্তের বিষয়টি জানতে পেরে রেডক্রিসেন্টের কক্সবাজার ইউনিটের সাধারণ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, এটা তদন্তের নামে আইওয়াশ। মূলত অপকর্মে অভিযুক্ত ‘নাজমুল-একরাম-সেলিম’ সিন্ডিকেট পক্ষে এজেন্ট হয়ে তাদের পক্ষে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার শামিল। ‘ঘোলা জলে মাছ শিকার’ করে অভিযুক্তদের বাঁচানোর জন্য কলকাঠি নাড়ছে শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদ।


সূত্র মতে, ২০১৭ সালের আগস্টে সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে অনিয়মের একটি তদন্ত হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটিরও সদস্য সচিব ছিলেন শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদ। ২০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ থাকলেও এক বছর পার হতে চললেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। মূলত রহস্যজনক কারণে শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদ নানা তালবাহনা করে সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বলে অভিযোগ রেডক্রিসেন্টের সাধারণ সদস্যদের। সেলিম আহমেদ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে শিকদার মোকাদ্দেস আহম্মদ তদন্ত প্রতিবেদন আটকে রেখেছেন বলেও অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের। কিন্তু এবারের তদন্ত তার চেয়েও জঘন্য হবে বলে অভিমত তাদের। কেননা ওইবারে তদন্তের জন্য সঠিক মাঠ জরিপ হলেও এবার কিন্তু তাও হয়নি। এতে ‘নাজমুল-একরাম-সেলিম’ সিন্ডিকেটের চরম দুর্নীতি ঢাকা পড়ে পাবে। তারা আরো বেপরোয়া দুর্নীতি করেতে উদ্ধুব্ধ হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার কথা অমান্য করে আমাকে বাদ দিয়েই এই তদন্ত করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় তারা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তদন্তটি করেছে তারা। কিন্তু এটি গ্রহণযোগ্য হবে না।’