ইমাম খাইর, পবিত্র মক্কা থেকে :
আল্লাহ তাআলার নির্দশনসমূহের মধ্যে সাফা-মারওয়া পাহাড় দুটিও অন্যতম। যা মসজিদে হারামের নিকটে অবস্থিত। আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে হজের যে সকল আনুষ্ঠানিকতা শিখিয়েছিলেন, তার মধ্যে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাঈ করা বা দৌঁড়ানোও ছিল অন্যতম। সাফা থেকে মারওয়ার মাঝখানে সবুজ চিহ্নিত স্থানে রমল বা সামান্য দোঁড়াতে হয়।
সাফা মারওয়াকে হজের রোকন করার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও শিক্ষা।
সাফা ও মারাওয়ায় তাওয়াফের কারণ পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত হাজেরা এ পাহাড় দুটিতে সাত বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়ানো; হজরত হাজেরার দৌঁড়ানোই ছিল মূল উৎস।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন হজরত হাজেরা ও তাঁর শিশুপুত্রকে খাদ্য-সামগ্রীবিহীন ও জন-মানবহীন মরু অঞ্চলে রেখে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের সাথে আনা খাদ্য-সামগ্রী শেষ হয়ে যায়। তখন খাদ্যাভাবে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের প্রাণ ওষ্ঠাগত।হজরত হাজেরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জন-মানবহীন মরু অঞ্চলের এ পবিত্র পাহাড় দুটির মাঝে সাতবার দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন। এক পর্যায়ে মধ্যবর্তী স্থানে স্বীয় আঁচল ছড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। অবশেষ মহান আল্লাহ তাআলা হজরত হাজেরার দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা, দুর্ভাবনা দূর করে দিয়েছিলেন। জন-মানবহীন অঞ্চলকে মানুষের জন্য আবাসযোগ্য করেছেন। খাদ্য ও পাণীয় দিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। বিশ্ববাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ ইবাদাতের স্থান নির্বাচন করেছেন। যা ছিল মহান আল্লাহ তাআলার অপার রহমত ও করুণা।
হজরত হাজেরার প্রার্থনার এ শিক্ষাকেই আল্লাহ তাআলা সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই হজের আনুষ্ঠানিকতায় সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈকে আবশ্যক করে দিয়েছেন।
আর তাঁর নিকট কাকুতি-মিনতির সঙ্গে দোয়ার করার, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার শিক্ষাই হলো সাফা-মারওয়ার মূল তাৎপর্য।
এ পবিত্র পাহাড় দুটি তাওয়াফের সময় সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত সকল দর্শনার্থী, হজ ও ওমরা পালনকারীর উচিত, তারা যেন অত্যন্ত দারিদ্র্য ও বিনয়ের সঙ্গে সাফা-মারওয়ায় সাঈ করে। মহান আল্লাহ তাআলার নিকট নিজেদের অভাব-অনটন, প্রয়োজন এবং অসহায়তার কথা পেশ করেন। মনের সকল জটিলতা-কুটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে সুপথ প্রাপ্তির প্রার্থনা জানান। জীবনের সকল পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
হজরত হাজেরার স্মৃতি বিজড়িত সাফা-মারওয়ার কার্যাবলীর তাৎপর্য হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা এবং পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের কর্তব্য হলো- সাফা-মারওয়ার জিয়ারাতকারী যেন স্থিরতা, পুণ্য, মুক্তি এবং মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেন।
আল্লাহ তাআলা যেন তাঁদেরকে অন্যায় ও পাপাচারের সংকীর্ণতার পথ থেকে সরিয়ে উৎকর্ষতা, ক্ষমা এবং পুণ্যের কাজের তাওফিক প্রদান করেন। যেভাবে হজরত হাজেরাকে তিনি বিপদমুক্ত করে সাহায্য করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাফা-মারওয়ার ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। যে কাজে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে হজরত হাজেরাকে সকল প্রকার বিপদাপদ থেকে মুক্ত করেছিলেন; সাফা-মারওয়ায় সকল মুসলমানকে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।