ভাটার পানি ৩ কিলোমিটার উজানে নিয়ে গিয়ে নিষ্কাষন!

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও হোটেল মোটেল জোনের একাংশের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সোয়া ৩ কিলোমিটার নালা নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নে ৮ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পৌরসভা। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের ওশান প্যারাডাইজ হোটেল পয়েন্ট থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলাতলী পর্যন্ত ভাটি অঞ্চলের পানি দীর্ঘ ৩ কিলোমিটারের বেশি ওজানে নিয়ে গিয়ে দরিয়ানগর বড়ছড়া খাল দিয়ে সাগরে নিষ্কাষিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ভাটি অঞ্চলের পানি ওজানে নিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাকে অবাস্তব আখ্যা দিয়ে এ প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দরিয়ানগর-শুকনাছড়ি এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল।
কক্সবাজার পৌরসভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার, এডিবি ও ওএফআইডি’র সাহায্যপুষ্ঠ ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় শহরের ওশান প্যারাডাইজ হোটেল পয়েন্ট থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলাতলী পর্যন্ত সোয়া ৩ কিলোমিটার নালা নির্মাণসহ সড়ক উন্নয়নে ৮ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু করেছে তারা। এরপর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি। এখনও হোটেল ওশান প্যারাডাইজ পয়েন্টেই ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। কলাতলী মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে ড্রেন নির্মাণ শুরু হলে মেরিন ড্রাইভে ব্যাপক যানজট সৃষ্টির আশংকা রয়েছে।
এদিকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভাটি অঞ্চলের পানি দীর্ঘ ৩ কিলোমিটারের বেশি ওজানে নিয়ে গিয়ে দরিয়ানগর বড়ছড়া খাল দিয়ে সাগরে নিষ্কাষিত করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাকে অবাস্তব ও ভয়ানক পরিবেশবিধ্বংসী বলে মন্তব্য করেছেন দরিয়ানগর-শুকনাছড়ি এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল।
দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, মেরিন ড্রাইভ তৈরির আগে বড়ছড়া খাল দিয়ে শুধু দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়গুলোর পানিই প্রবাহিত হত। মেরিন ড্রাইভ তৈরির সময় শুকনাছড়ির পানি সরাসরি সাগরে নিষ্কাষনের পথ বন্ধ করে দিয়ে পাহাড় ও মেরিন ড্রাইভের মধ্যবর্তী নালা তৈরির মাধ্যমে বড়ছড়া খাল দিয়ে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এরফলে ৫শ মিটার পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার পানি বর্তমানে বড়ছড়া খাল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু তীব্র বর্ষণের সময় উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার পানি বড়ছড়া খালে পৌঁছার সময় দুইপাড়ের পাহাড় ও মেরিন ড্রাইভে তীব্র ভাঙন তৈরি করছে।
একই কথা জানান শুকনাছড়ি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মামুন সওদাগর। তিনি জানান, তীব্র বর্ষণের কারণে গত বর্ষায় দরিয়ানগর পাখি অভয়ারণ্য সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভের গাইডওয়াল ভেঙ্গে গেছে। এসময় বেশ কিছুপাট তলিয়ে যায়। অভয়ারণ্য পাহাড়ের কিছু অংশও নালায় ধসে পড়ে। এই অবস্থায় কলাতলীর বিরাট অঞ্চলের ভাটির পানি ওজানে এনে নিষ¦াষিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের পাহাড় ও মেরিন ড্রাইভ ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভেঙ্গে পড়তে পারে।
একই আশংকা প্রকাশ করেন পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তিনি বলেন, ভাটির পানি কখনও ওজানে নিয়ে গিয়ে নিষ্কাষিত করা যায় না। আর তা জোর করে নিতে চাইলে পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি করবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বড়ছড়ার উত্তর পাশে ধইল্যাছড়া, গইয়মতলীরছড়াসহ পাঁচটি পাহাড়ী ছড়ার পানি সরাসরি সমুদ্রে চলে যেত। ফলে কলাতলী ও লাইট হাউস এলাকায় কখনও বন্যা বা জলাবদ্ধতা তৈরি হত না। তবে কিছু এলাকায় সৈকত ও পাহাড়ের মাঝামাঝি জলাভূমিতে এসব পাহাড়ী পানি জমা হত, যা সৈকতের সাথে আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত খাল বা নালা দিয়ে বাঁকখালী নদী অথবা নাজিরারটেক হয়ে সাগরে চলে যেত। কিন্তু সম্পতি এসব এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে হোটেল মোটেল জোনসহ নানা স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানি নিষ্কাষনে কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং এরফলে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের একাংশসহ কলাতলীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, পৌরসভার প্রকৌশলীরা উক্ত প্রকল্প গ্রহণের পর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই কলাতলী মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল আপত্তি তোলায় এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।