বার্তা পরিবেশক:

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১২ তম পাক্ষিক সাহিত্য ও রবীন্দ্র জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। তিনি গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় নন্দিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন।

সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ৪ মে ২০১৮ শুক্রবার বিকেলে একাডেমীর এন্ডারসন রোডস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বক্তাগণ আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে। নানান রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস, ছোটোগল্প, সংগীত, নৃত্যনাট্য, পত্রসাহিত্য ও প্রবন্ধসমূহ। তাঁর বহুপরিচিত গ্রন্থগুলির অন্যতম হল গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, রক্তকরবী, শেষের কবিতা ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের কাব্য, ছোটোগল্প ও উপন্যাস গীতিধর্মিতা, সহজবোধ্যতা, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতিবাদ ও দার্শনিক চিন্তাধারার জন্য প্রসিদ্ধ। তাঁর রচিত গান ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত।

একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে একাডেমীর স্থায়ী পরিষদ চেয়ারম্যান কবি সুলতান আহমদ মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কবি মীর্জা মনোয়ার হাসান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ছড়াকার নুরুল আলম হেলালী ও নন্দন পাল।

বক্তাগণ আরো বলেন, মাত্র আট বছর বয়সে রবিগুরু প্রথম কাব্যরচনায় প্রবৃত্ত হন। ১৮৭৭ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে “ভানুসিংহ” ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথম ছোটোগল্প ও নাটক রচনা করেন এই বছরেই। রবীন্দ্রনাথ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর বিচিত্র ও বিপুল সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর মধ্য দিয়ে। বঙ্গীয় শিল্পের আধুনিকীকরণে তিনি ধ্রুপদি ভারতীয় রূপকল্পের দূরুহতা ও কঠোরতাকে বর্জন করেন।

রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খ-ে রবীন্দ্র্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খ-ে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

পরে একাডেমীর নির্বাহী সদস্য কল্লোল দে চৌধুরী রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কবি মনজুরুল ইসলাম, কবি অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী, আজাদ মনসুর ও আবুল কালাম।

একাডেমীর ৪১৩ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভা ১১ মে

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৩ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভা আগামী ১১ মে ২০১৮, শুক্রবার বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।