মো:জয়নাল আবেদীন টুক্কু,নাইক্ষ্যংছড়ি:

কথায় কথায় লোকে বলে নামে আছে কাজে নেই। রামুর গর্জনবুনিয়া বা গর্জনিয়া এলাকাটি সে  উদাহরণের জ্বলন্ত স্বাক্ষী । বৃহত্তর গর্জনিয়া এলাকাটি ১৯৭৩ সালে গর্জনিয়া,কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নে বিভক্ত হয়। এভাবে এ  এলাকাটি নামে গর্জানয়া হলেও এখানে বর্তমানে কোন গর্জনগাছ বা বৈলাং গাছ নেই। যেখানে এক সময় গর্জন,জাম, বৈলাংসহ আরো হরেক রকম গাছ ছিল বনের পর বন। পাহাড়ের পর পাহাড়-সর্বত্র। কালের পরিক্রমায় আজ সব গর্জনগাছ বা বৈলাংগাছ হারিয়ে গেলেও-বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে ৪শ বছরের  সেই বিশালাকার ও মেঘ ছোঁয়া ‘রহস্যময়’ একটি বৈলাং গাছ।
গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সের আবদু শুক্কুর বলেন,  শুধু বয়সে নয়-গাছটির রহস্যও আছে। গাছটিতে সহজে কেউ দা’র কূপ দেয় না। দিলে রক্তের মাতো লালা বের হয়। আর কেই কূপ দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। আর সেই জন্যেই আবদু শুক্কুর শুক্রবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের  সাথে গাছের পাশে যেতে পর্যন্ত চায় নি। বারবার বলে উঠেন, তিনি গরীব মানুষ, এ গাছ মানুষ খায়। তাই তিনি এ গাছের পাশে যাবেন না। শেষ পর্যন্ত যায়ওনি।

তার কথার সাথে হুবহু একই কথা বলেন কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের প্রবীণ মুরব্বি সাবেক মেম্বার নুরুজ্জামানও। তিনি বলেন, বৈলাং গাছ নয় শূধু-এটি গুটি বৈলাং। কয়েক লাখ টাকার মূল্যবান এ গাছটি। বিশালাকার এ গাছটি জেলার একমাত্র পুরোনো গাছ। তিনি এক সময় গাছের ব্যবসা করতেন বলেই বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করে বলছেন। তার বাপ দাদারাও এ গাছটি এভাবে দেখেছেন বলেও দিনি দাবী করেন।

স্থানীয়দের মতে, এক সময় এ পাহাড়ে অনেক বৈলাং গাছ ছিল। আর গর্জনগাছ ছিলো অগণিত। এ সবই এখন স্মৃতি। এখানে আর কোন মূল্যবান গাছ নেই। আছে শুধু শূন্যে দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র বৈলাং গাছটি। যেটির চর্তুপাশের সব মাটি সরিয়ে ফেলেছে কিছু অসাধু লোক।  হয়তো তারা  কর্তনও করতে চেয়েছিল এক সময়-কিন্তু তা তারা পারে নি। রহস্যঘেরা এ গাছে যাদু আছে। রাতে এ গাছের নিচে অনেক সময় আগুন জ্বলে, দিনে কেউ দা দিয়ে কূপালে রক্ত ঝরে। গাছটি ছুলেই জ্বর উঠে। এ জন্যে বনদসূরা এ গাছটি কাটতে পারেনি। যেটি এখন কালের স্বাক্ষী। এছাড়া গাছটি নিয়ে এলাকার লোকজনের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে এ গাছটি নিয়ে রহস্যের ঢালডালা ছড়াতে লাগলে খবর পেয়ে এ প্রতিবেদক সরেজমিন অনুসন্ধান করতে গেলে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

স্থানীয় মৌলভৗ কাটাস্থ রামুর কচ্ছপিয়া বনবিট কর্মকর্তা তপন কান্তি পাল জানান, এটি তার অধীনস্থ সংরক্ষিত বনে। তিনি বিষয়টি অবহিত আছেন। কচ্ছপিয়ায় একটি শাহ সূজা সড়ক আর অপরটি এ বৈলাং গাছ। এ দুটি ঐতিহাসিক স্মৃতির মধ্যে বৈলাং গাছটি  সংরক্ষন করতে তিনি তৎপরতা শুরু করেছেন ইউতিমধ্যেই।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো: ইসমাঈল নোমান বলেন, এ রহস্যঘেরা গাছটির বিষয়ে তিনি শুনেছেন সম্প্রতি। এ টির খোজঁখবর নিয়ে তিনি পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবেন।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শাহজান আলী বলেন, রহস্য ও বৈচিত্রময় এ গাছটি বিষয়ে তিনি খোজঁ-খবর নেবেন।