ডেস্ক নিউজ:

মানিলন্ডারিং মামলায় সাতবছর ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করতে ইতোমধ্যেই ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে এ বিষয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনকেও অবহিত করা হয়েছে। বুধবার (১৮ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

চিকিৎসার নামে এই মুহূর্তে ব্রিটেনে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সেদেশের সরকারও তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যের সরকার যদি তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েই থাকে, তাহলে সেদেশের সরকার কোন পদ্ধতিতে তারেক রহমানকে বাংলাদেশকে ফেরত দেবে, তা ওই দেশের সরকারের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তার (তারেক) নামে আরও মামলা চলমান রয়েছে। আমাদের সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা নিয়েছে। আমরা তাকে আইনের মুখোমুখি করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি। যেসব মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই সাজা কার্যকর করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালাবো।’ এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে যদি কোনও ধরনের আবেদন করতে হয়, তাহলে তা আমাদের বিষয় নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই আবেদন করা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে চাহিদা অনুযায়ী যা যা করণীয়,তা আমরা করেছি।’ ইন্টারপোলে চাহিদাপত্র দেওয়া এবং তাদের অ্যাম্বাসিকে জানানো, সবই করা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সব প্রক্রিয়া শেষ করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে কতদিন সময় লাগতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারবো না। এটা নির্ভর করছে ব্রিটিশ সরকারের ওপর। কারণ, ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি কিভাবে নেয় তার ওপর। আমি শুনেছি ও জেনেছি, ব্রিটিশ সরকার নাকি তারেক জিয়াকে (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এটি আমাদের কাছে শতভাগ নিশ্চিত সংবাদ নয়। আমরা কনফার্ম নই। তবে আমি শুনেছি।’ ব্রিটিশ সরকার তারেক জিয়াকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকলে, তারা কিভাবে তাকে দেশে ফেরত পাঠাবে, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও বিদেশে অর্থপাচারের মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নেবে। দণ্ডিত ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও তার ছেলে তারেক রহমানকে দেওয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড। এর আগে অর্থপাচার মামলায় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এছাড়া, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এই মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে আছে। এর বাইরেও তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া তারেক রহমান পরের বছর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। গত ১০ বছর ধরে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দুই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য একটি অবাধ স্বাধীনতার দেশ এবং যে কোনও ব্যক্তি এখানে আশ্রয় নিতে ও শরণার্থী হতে পারেন। তবে তারেক রহমান আদালতে একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি না, একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে কিভাবে যুক্তরাজ্য আশ্রয় দিয়েছে?’

লন্ডনে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে (ওডিআই) ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন গল্প: নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূলবক্তা হিসেবে ভাষণ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলছি এবং অবশ্যই একদিন আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’