ডেস্ক নিউজ:
১. দলীয় এমপিদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছে টিমগুলো

২. নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু 
৩. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরতে চলছে পুস্তিকার কাজ 
৪. জোটের প্রার্থীদের অবস্থানের খোঁজখবরও নেয়া হচ্ছে 
৫. ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় হ্যাটট্রিক (টানা তৃতীয়বার) বিজয়ের তোড়জোড় শুরু করেছে দলটি। ইতোমধ্যে দলের ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে। প্রচার-প্রচারণার জন্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরতে পুস্তিকার কাজও শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে সাধারণ ভোটারদের হাতে হাতে দেয়া হবে এই পুস্তিকা। নির্বাচনী এজেন্টদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন দলের পক্ষ থেকে তাদেরও ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।

 নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আরও কঠোর হবেন। মনোনয়ন না পেয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হন বা দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেন, তাকে শুধু দল থেকে বহিষ্কারই করা হবে না তার বিরুদ্ধে অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করলেই তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। 

দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, গত নয় বছরে এই সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে। যেমন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের অগ্রযাত্রার স্বীকৃতি, পদ্মা সেতুসহ নয়টি মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। সরকারের এই উন্নয়ন কাজে খুশি হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দেবেন জনগণ।

দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন এই নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সারা দেশে মাঠকে প্রস্তুত করছে। দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থীর নির্বাচনের ঘোষণা, দলের এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের মনোমালিন্য, ক্ষোভসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দলকে নির্বাচনের উপযোগী করে তুলছে আওয়ামী লীগ।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত ১৫টি টিম দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরও করছে। সফরের সময় প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি টিমের সদস্যরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য তিনজন করে প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এসব সফরে নেতাকর্মীদের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং দেশব্যাপী বিএনপির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

সাংগঠনিক এই সফরে বেশকিছু এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন শাসক দলের নেতারা। কী কারণে তৃণমূলে অন্তঃকোন্দল? নির্বাচন এলে কেন অনুগত কর্মীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন? এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব বাড়ার কারণ কী? এসব সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন ও উত্তরণের পথ বের করার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেয়া জরিপের কাজটিও করছেন টিমের সদস্যরা। স্থানীয় নির্বাচনগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও টিমের সদস্যরা স্মরণে রাখছেন।

 

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা সফরে দলীয় এমপিদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছে টিমগুলো। স্থানীয় এমপিদের সমালোচনা করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা নেতাদের তালিকাও করছেন সফরে অংশগ্রহণকারী নেতারা। দলের বাইরের নেতিবাচক প্রচারকারীদের তালিকাও উঠে আসছে এসব সফরে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাই, জোটের প্রার্থীদের অবস্থানের খোঁজখবরও নেয়া হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেই যোগ্য প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নামাবেন শেখ হাসিনা।

সূত্র আরও জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আরও কঠোর হবেন। মনোনয়ন না পেয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হন বা দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেন, তাকে শুধু দল থেকে বহিষ্কারই করা হবে না তার বিরুদ্ধে অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করলেই তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, অনেক আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছেন। ইশতেহার তৈরিতে দলের নেতারা সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া সরকারের নয় বছরের উন্নয়ন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুস্তিকা প্রকাশের কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে এগুলো সাধারণ ভোটারদের হাতে চলে যাবে।

তিনি বলেন, ভোট সেন্টারের এজেন্টদের যারা ট্রেনিং দেবেন এখন তাদের প্রশিক্ষণ চলছে।

দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের টার্গেট ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। কারণ এ সময় ওয়েদার (আবহাওয়া) ভালো থাকে। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ বিষয়টি এবং দিন-তারিখ ঠিক করবেন নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে। আমাদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হলে বা কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টরা সে বিষয়ে সহযোগিতা করছে।

উল্লেখ্য, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৬ এপ্রিল সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করে। এই কমিটিতে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা চেয়ারম্যান, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হোসেন তওফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) কো-চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য সচিব মনোনীত হয়েছেন।

আর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা।