গোলাম আজম খান:
নিজ দেশের অভ্যান্তরের নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে ৫ সদস্যের একটি পরিবারকে ফুঁসলিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে (নাটক মঞ্চস্থ করেছে) মিয়ানমার সেনা কর্তৃপক্ষ ।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো উন্নত হয়নি। জাতিসংঘের এমন অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করতে এবং রাখাইনে পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ বুঝাতে এমন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের অভ্যান্তরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, যে পরিবারটিকে প্রত্যাবাসনের কথা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে তা বানোয়াট পরিবারের ওই পাঁচ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়নি নো-ম্যান্স ল্যান্ডের মিয়ানমারের অংশে ছিল। পরিবারটির অন্য ২ জন সদস্য এখন নো-ম্যান্স ল্যান্ডে রয়েছে । গত বছরের ২৫ আগস্টের পর সংঘটিত সেনা তান্ডবকালীন আলীথাইঞ্জ গ্রামের আক্তার কামাল গ্রাম ছেড়ে কিছু দিনের জন্য স্থানীয় পাহাড়ে আত্মগোপন করলেও, পরে গ্রামে ফিরে যায় । সেখান থেকে আবারও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের শরণার্থী ও পূনর্বাসন কর্তৃপক্ষের কাছেও এ পরিবারটির সম্পর্কে কোন তথ্য জানা নেই । তারা জানেনা, কখন কিভাবে পরিবারটির ৫ সদস্য বার্মায় ফিরে গেল।
সূত্র জানিয়েছে, উত্তর রাখাইনের আলীথাইঞ্জ গ্রামের এক রোহিঙ্গা পরিবারকে জিম্মি করে শরণার্থী সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ । পরিবার প্রধানের নাম আক্তার কামাল । তিনি গ্রামের হুক্কাটা (চেয়ারম্যান) ছিলেন। জিম্মি পরিবারটির ৫ সদস্যকে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে এনভিসি দেয়া হয়েছে । এসময় সেনা কর্তৃপক্ষের মিডিয়া উইংয়ের সদস্যরা স্থীর ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে । এসব ছবি মিয়ানমার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে প্রচার করা হচ্ছে যে, “জাতিসংঘের সতর্কতার মধ্যেও রাখাইনে ফিরে এসেছে একটি বাঙ্গালী শরণার্থী পরিবার । তারা স্বেচ্ছায় এনভিসি (অভিবাসী কার্ড) নিয়েছে । রাখাইনে এখন অভিবাসীর বাঙ্গালীর জন্য নিরাপদ”।
বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘গত রোববার রাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু শূন্যরেখায় অবস্থান করা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার মিয়ানমারে ফেরত গেছে বলে প্রচার হয়েছে। ওই শূন্যরেখাটি মিয়ানমারের অংশবিশেষ। তাই এটি কোনোভাবেই প্রত্যাবাসনের পর্যায়ে পড়ে না। তারা তাদের দেশে আসা-যাওয়া করতেই পারে। সুতরাং এটি প্রত্যাবাসন নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের সাথে চুক্তি হলেও এখনো কোন রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন করেনি বাংলাদেশ ।
উল্লেখ্য,গত সপ্তাহেজাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব উরসেলা মুলার মিয়ানমার সফরের পর বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এমন বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করতেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নাটক শুরু করেছে।