বিশেষ প্রতিবেদক :
টেকনাফের চাঞ্চল্যকর আলি উল্লাহ আলো হত্যা মামলার আসামী টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যানের পুত্র দিদারুল আলম দিদারকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে। সোমবার ১৬ এপ্রিল টেকনাফ উপজেলা আদালতে জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উক্ত হত্যা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) আসামীর তালিকায় তার নাম না থাকলেও পৃথক ভাবে সিআইডি তদন্ত রিপোর্টে দিদারের নাম উঠে আসে এবং উক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠিয়ে দিলে আদালত তা আমলে নেয়। উক্ত মামলায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামী দিদারুল আলম দিদারকে কারাগারে প্রেরণ করে। জানা যায়, আলো হত্যা মামলার আসামী ওই দিদার, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র এবং সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। বিগত ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম¦র সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর পুত্র আলি উল্লাহ আলোকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে এবং ওই দিনই পিতা আবদুল্লাহ বাদি হয়ে ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে মামলা নং-৩৭০/২০১১। পরে উক্ত মামলার তদন্তের দায়িত্বে দেয় হয় সিআইডিকে, দীর্ঘ দিন তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যানের পুত্র দিদার ও শাহপরীরদ্বীপের মুহিব্বুল্লাহ উক্ত আলো হত্যার ঘটনায় জড়িত বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। এদিকে আলো হত্যা মামলার বাদি পিতা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানায়, টেকনাফের নৃশংস হত্যাকান্ড আলো হত্যা মামলা আড়াল করার জন্য আমি ও আমার ভগ্নিপতি সাইফুল করিমকে টেকনাফের অপর একটি মিথ্যা মোস্তাক হত্যা মামলায় জড়িত করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। এব্যাপারে
গত ১৪ এপ্রিল শনিবার দৈনিক দেশবিদেশ ও দৈনিক কালের কন্ঠ এবং ১৬ এপ্রিল সোমবার প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠক মহল ও শুভাকাংখিদের জানিয়ে দিতে চাই ১৬ এপ্রিল টেকনাফের চাঞ্চল্যকর আলো হত্যার আসামী উপজেলা চেয়ারম্যারে পুত্র দিদারকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে এতেই প্রমানিত হয়েছে আসল দোষী কারা। টেকনাফে মোস্তাক অপহরণের দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাস পর আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আসামী করা হয়েছে। আমি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলছি ওই ঘটনায় আমি কোনভাবে জড়িত নই। প্রতিপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনী তদন্তপূর্বক ওই ঘটনার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। আবার দীর্ঘদিন পরে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য এবং আমার পুত্র আলো হত্যার মামলাটি ভিন্ন হাতে প্রবাহিত করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জাফর আহমদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করেছে। সঠিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে আমি উক্ত মামলার আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আমি উক্ত প্রকাশিত সংবাদে পাঠক বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সঠিক তথ্য তুলে ধরছি। ইতিপূর্বে আমি মামলার বাদি জাফর আহমদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছি এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী মনে করে আমি ও আমার ভগ্নিপতি সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিত্যা মামলা রুজু করেছে। তিনি বলেন, মোস্তাক অপহরণ ঘটনাটি ছিল ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট রাত ৮ টায়, এবং ঘটনার ৩ দিন পর গত ১৩ আগস্ট অপহৃত ব্যক্তি মোস্তাকের পিতা জাফর আহমদ বাদি হয়ে ৭/৮ ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি ফৌজদারী মামলা রুজু করে। দীর্ঘ ২ বছর ৩ মাস ৪ দিন পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিগত ১৭ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার চূড়ান্ত রিপোর্র্ট দেয় স্বারক নং- ৪২। উক্ত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, অতিরিক্ত ডিআইজির নির্দেশে এঘটনার উপর ইতিপূর্বে পৃথক আরো একটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কর্তৃক (স¦ারক নং- পিবিআই মামলা/১৩৮-২০১৭/১১/ সিআরওপূর্ব তারিখ ০১/০১/২০১৭) তদন্ত রিপোর্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে উক্ত অপহরণ মামলার, টেকনাফ থানা পুলিশ ও পিবিআই পৃথক দুটি তদন্ত রিপোর্ট চুড়ান্ত করে উক্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে। কিন্তু কোন রিপোর্টেই আমার নাম উল্লেখ নেই, তদন্ত কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন, সবই স্বাক্ষীগণ বলেছেন আমরা ওই দিন মোস্তাককে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই লোকদের কাউকে ছিনি নাই এবং ওরা আমাদের পরিচিত মুখ নয়। তিনি তদন্ত রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেছেন, তদন্তকালে অপহৃত মোস্তাকের সাথে এলাকার কোন ব্যক্তির সাথে কোন ঝগড়া, মারামারি, হানাহানি, বাকবিতন্ডাসহ কোন শত্রুতার ঘটনা পাওয়া যায়নি, এমনকি ইতিপূর্বে মোস্তাক বাদি হয়ে অথবা মোস্তাকের পক্ষে কোন ব্যক্তি বাদি হয়ে কারো বিরুদ্ধে জিডি করেছে এমন কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
আমি আবদুল্লাহ দৃড়তার সাথে বলতে চাই-মোস্তাক অপহরনের পরে বাংলাদেশের সমস্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, তাকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি তার পরিবারও ওই সময় সাংবাদিক সম্মেলন করে আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন অপহৃত মোস্তাককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কখনকার ঘটনা কখন টেনে এনে আজ ২ বছর ৮ মাস পর আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ন রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে একটি মহলের ঈন্ধনে আমাকে ঘায়েল করতে এ প্রচেষ্টা করছে বলে আমি বিশ^াস করি। আমি প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই-আপনারা দেখুন, বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করুন এবং মোস্তাক অপহরনের পর থেকে সমস্ত পত্রিকার কাটিং দেখুন। অপহরনের ঘটনায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ওই বছরের ১৩ আগস্ট বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামী করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। টেকনাফ থানা মামলা নং ২০। ওই মামলায়ও আমি জড়িত থাকার কোন হদিস পায়নি পুলিশ। অহেতুক আমাকে হয়রানি করতে এতবছর পর সম্পূর্ন সাজানো পরিকল্পিত অভিযোগে আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে। আমি আপনাদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ পরিবারের সকল সদস্য দীর্ঘদিন যাবৎ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে এক থেকে দশ নম্বর পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের দুই পরিবারের ব্যক্তিগণই জড়িত রয়েছে। উক্ত তালিকা অনুুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, তার পুত্র অপহৃত মোস্তাক ও আলো হত্যা মামলার কারাগারে প্রেরিত আসামী দিদারসহ অপরাপর আরো ২ ছেলের ছবিসহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় অসংখ্যবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসন তার বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার করেছে এটা সবাই জানে এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
অতএব আমি ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য নিজের পুত্র সন্তান আলি উল্লাহ আলো’কে হারিয়েছি। ব্যবসা বাণিজ্য হারিয়েছি অনেক। বর্তমানে স্বাধীনভাবে রাজনীতি চর্চা করতে পারছিনা। সবসময় প্রতিপক্ষের জুলুমের শিকার হচ্ছি। সর্বশেষ আমাকে পুরনো একটি তাদের ঘরোয়া কাহিনী অপহরন নাটক আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে ফাঁয়দা লুটে নিতে অপপ্রয়াস শুরু করেছে। তারা এভাবে আমার পারিবারিক সম্মানহানি করছে বারবার। রাজনীতির মাঠ থেকে দুরে রাখতে একজন উপরিমহলের ঈন্ধনে তারা এসব নাটক পরিচালিত করছে। আমি এসব কাজে কোন সময় জড়িত ছিলাম না এবং জড়িত নই। অতপর প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে পাঠকমহল ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বিভ্রান্তি না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।