ইমাম খাইর, সিবিএন:
‘আজ প্রায় এক মাস, ঘরে যেতে পারিনা। দোকানে থাকি, হোটেলে খাই। নেই গোসল-আসল। খেয়ে না খেয়ে কষ্টে বড় করা সন্তানেরা জ্বালাতন করছে। আমার পায়ে কোপ মেরেছে। শত শত মানুষের সামনে বেইজ্জত করেছে অনেকবার। ঘরে গেলে জবাই করে দেবে বলছে। ৩ ছেলে মো. ছলিম উল্লাহ, মো. মুছা, অলি উল্লাহ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। অনৈতিক কাজে বাঁধা দেয়ায় বেশ কয়েকবার মারধর করেছে। সহায় সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের কারণে আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারছিনা।
কথাগুলো অঝোর নয়নে বলছিলেন ষাটোর্ধ ছৈয়দ হোছন। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মধ্যম নিদানিয়া এলাকার মৃত এরশাদ উল্লাহর ছেলে। ৯ এপ্রিল বিকালে সোনারপাড়া বাজারে একটি দোকানে বসে কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন চাদিদিকে অনেক মানুষ জড়ো হয়। তারা শুনে বিস্মিত, হতবাক। ছৈয়দ হোছনও মাঝে মধ্যে খুব আবেগ তাড়িত হয়ে যাচ্ছিলেন। ঢুঁকরে কেঁদে বর্ণনা দেন তার দুঃখভরা সব কাহিনী।
তিনি বলেন, আমি জীবনে খুব কষ্ট করেছি। বনের লাড়কি এনে বাজারে বিক্রি করেছি। মানুষের লেবারি করেছি। ২৮টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছি। সংসারের প্রয়োজনে রাত দিন পরিশ্রম করেছি। নিজের সুখ কোন দিন দেখিনি। বেশ কিছু সম্পদেরও মালিক হয়েছি। সেই সম্পদ আজ আমার জন্য কাল হয়ে গেছে মনে করছি। সম্পদের লোভে নিজের জন্ম দেয়া সন্তানেরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
পৃথিবীটা বড়ই নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে। কেন জানিনা এমন নিয়তি। আমার মুখের দাড়ি-গোপ সাদা হয়ে গেছে। এই বয়সে পৌঁছে জন্মদাতা সন্তানরা মারধর করছে। মরার বয়সে আমাকে ঘরের বাইরে রাত কাটাতে হচ্ছে।
ছৈয়দ হোছনের প্রথম স্ত্রী মারা যায়। সেই ঘরে ৫ ছেলে সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে আছে ১ মেয়ে ২ ছেলে। প্রথম স্ত্রীর ৫ সন্তানের মধ্যে ৩ জন মাদকাসক্ত। বাকী দুই ছেলে রহমত উল্লাহ ও ছালামত উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই।
ছৈয়দ হোছন আক্ষেপ করেন, ইয়াবার টাকা জোগাড় করতে ঘরে থাকা ৬টি গরু, ২০ কহন সুপারী বিক্রি করে ফেলেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী তিন সন্তান আমিরা, সামির ও জমিরকে বাড়ীতে যেতে দিচ্ছেনা। তারাও আমার সাথে হোটেলে খেয়ে দোকানে থাকে। মেয়ে আমিরা স্কুলে গেলেও পড়ালেখা করার সুযোগ পায়না। প্রতিনিয়ত পারিবারিক টেনশনে বেড়ে উঠেছে তারা। তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
এদিকে তিন সন্তান মোহাম্মদ মুছা, অলি উল্লাহ ও ছলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাবা ছৈয়দ হোছন। গত ২ এপ্রিল দেয়া অভিযোগে তিনি নগদ ৪ লাখ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২০ কহন সুপারী লুটের অভিযোগ আনেন। বাঁধা দিতে গিয়ে তাকে এলোপাতাড়ী মারধর, টানা হেঁছড়া করে ঘরে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় বলে উল্লেখ করেন। এর আগে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মৌজদারী মামলা নং-১৮৮/২০১৬। এই মামলায় দুই ছেলে ছলিম উল্লাহ ও মোহাম্মদ মুছার বিরুদ্ধে মাদক, মানবপাচার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ আনেন পিতা ছৈয়দ হোছন।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগটি উখিয়া থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক তিনি ব্যবস্থা নেবেন। ওসি মো. আবুল খায়ের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান। জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ছৈয়দ হোছনের অভিযোগ সত্য। নিজের সন্তানেরা তাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমাদের সাধ্য মতো সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।