সংবাদদাতা:
মহেশখালী পৌরসভার ঘোনাপাড়ায় এক যুবককে মারধর হয়েছে। ফেটে রক্তাক্ত করে দেয়া হয়েছে মাথা। বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সকাল নয় টায় ঘটনাটি ঘটে। সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে আহত যুবকের। আহত তোফায়েল আহমদ ঘোনাপাড়া জাফর আলম সওদাগরের পুত্র। পেশায় একজন গ্রামীণফোন কোম্পানীর সেলসম্যান।অপরদিকে অভিযুক্ত সদ্য মালেয়েশিয়া প্রবাসী আবছার ঘোনাপাড়ার মোঃ আবুল হাসেমের প্রথম পুত্র। এলকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তার উভয়েই নিকটাত্মীয় এবং একই গোত্রের। কিছু জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের অতীত আছে। অতীতের মনোমালিন্য মান-অভিমান থেকে সহিংস ঘটনায় রূপ নেয়। কয়েকদিন আগেও তাদের অভিভাবকের মাঝে হাতা-হাতির মত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। পরে এটা মিমাংসার জন্য স্থানীয় মেয়র মকছুদ মিয়ার কাছে বিচারাধীন আছে বলে এক নিকটতাত্মীয় জানান।ঘটনার বিবরণে ভিকটিমের ভাই আয়াছুর রহমান বলেন, আহত তোফায়েল প্রতিদিনের মত সকালে গ্রামীণফোনের রিচার্জ বিক্রির উদ্দেশ্যে বের হয়ে ঘটিভাংগা থেকে ফিরে গোরকঘাটা বাজারে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘোনাপাড়া রাস্তার মোড়ে রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় তোফায়েলকে একা পেয়ে চলন্ত মোটর সাইকেলে লোহার রডের আঘাতে মাটিতে ফেলে দেয় আবুলহাসেমের পুত্র আবছার। পরে তার পরিবারের আরো লোকজন দা-ছোরা নিয়ে জড়ো হয়ে রাস্তায় সবার সামনে মারধর করে মারত্মক জখমি করে বেহুঁশ অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উদ্ধার করে প্রথমে মহেশখালী হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তোফায়েলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে। বর্তমানে সদর হাসপাতালে সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থায় তার ব্যবহৃত স্ক্রিন টাচ মোবাইল, কোম্পানীর একটি ট্যাব, রিচার্জের নগদ সত্তর হাজার টাকাও রিচার্জ মোবাইল নিয়ে নেয় বলে দাবী করেন আয়াছ। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আবছারের পিতা আবুল হাসেম সবই জানে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ছেলেকে দিয়ে নিরাপরাধ তোফায়েলকে পরিকল্পিতভাবে বিচারধীন থাকাবস্থায় ঘটনাটি ঘটায়। এবিষয়ে কথা হয় আবছারের পিতা আবুল হাসেমের সাথে তিনি মোবাইলে বলেন, ঘটনাটি সত্য, তবে অনেক কিছু সত্য নয়। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে নিজে ছিলেন না বলে দাবী করে ঘটনার বিবরণে জানান, আবছার সকালে মসজিদ পুকুরে গোসল করতে গেলে জাফর আহমদের ছেলে তোফায়েল জনসম্মুখে টিটকারি মারেন-‘হাটার সময় মাথা নিচু করে হাঁটবি, না হলে বুঝবি ’ ওই সময় আবছার কিছু না বলে চলে আসে। কিছুক্ষণপর তোফায়েলসহ আরো একজন বাইকে করে বেশ কয়েকবার আমার বাসার সামনে দিয়ে গাড়ী চালায়।তখন আবছার মাথা গরম করে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটায়। তিনি স্বীকার করেন এটা তার ছেলের উচিত হয়নি তাই এটা সামাজিভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে আয়াছুর রহমান বলেন, এরা আগেও অনেকবার এলাকার সম্মানি মানুষকে এভাবে আহত করে অসম্মান করেছেন তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন। মহেশখালী পৌরসভার (৫নং ওয়ার্ড) ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের মতে, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান দরকার বলে মনে করে লিখেন-‘যেখানে সমস্যা আছে সেখানে সমাধানও আছে। সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান হওয়া দরকার মনে করি’।সাংবাদিক আবু তাহেরের মতে, সমঝোতাই একমাত্র সমাধান বলে কমেন্টে ছোট লাইনের শান্তির বার্তা লিখেন। একই গোত্রের দুই চাচাত ভাই সাবেক কমিশনারের ছেলে ব্যবাসয়ী মুজিবুল হক ও তার চাচাত ভাই মহেশখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র নিজেকে এবং সমাজকে প্রশ্ন রেখে অভিন্ন কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে-‘ মন চায় এলাকাটা ছেড়ে অন্য কোথায় চলে যায় ? আল্লাহ অসীম রহমতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠার দোয়া কামনা।’গোরকঘাটা বাজারের সুপরিচিত ব্যবসায়ী ঘোনাপড়ার বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহর মতে, বিচারের বাণী নিভৃত্তে কাঁদে।সদ্য কৈশোর পার করা উত্তরঘোনা পাড়ার সমাজসচেতন তরুণ হাজী আবুল হোসেনের পুত্র সাদ্দামের কমেন্ট অনেক ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ যার মাঝে ভ্রাতৃত্বের জয়গান তার মতে- খুব দুঃখেরবিষয় আমরা ঘোনাপাড়াবাসি এক হয়ে থাকতে চাই, মারামারি কাটাকাটি আমরা কামনা করি না, ভাই ভাই হয়ে থাকতে চাই।’শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একই গোত্রের হওয়ায় অনেকই চেষ্টা করছেন সমাঝোতা সমাধানের। বিপরীতে একই গোত্রের হলেও উত্তেজনায় ঘি ঢেলে সুবিধা আদায়ের চেষ্টারত আছে। থানা সূত্রে জানা যায়, এবিষয়ে এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।এবিষয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন মুরব্বি ও নেতৃস্থানীয় লোকজনের বক্তব্য অভিমত-একই স্থানে থাকলে নিজেদের মধ্যে অনেক কিছু হয়। তার জন্য বিচারের জন্য দুয়ারে দুয়ারে না ঘুরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করতে পারলেই সম্মান ও আত্মীয়তা দুটিই রক্ষা হয়।