সাংবাদিক হামলার মূল হোতা ভুট্টো ও গুলিতে আহত নিহামনি

বিশেষ প্রতিবেদক :
টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার লোকজন বর্তমানে ফের নুরুল হক ওরফে ইয়াবা ভুট্রো বাহিনীর ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছে। ওই গ্রামের দূর্ধষ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান, ডজন মামলার আসামী ভুট্্েরা ও তার সহযোগীরা অচিরেই জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে আসছে এ খবরে নিরীহ গ্রামবাসীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে ভুট্টো বাহিনীর লোকজন নিরীহ গ্রামবাসীর উপর ব্যাপক চাঁদাবাজীসহ নানা অত্যাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলার বাদি ও আত্মীয় স্বজনকেও প্রাণনাশের হুমকি ও বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনায় বিভিন্ন মামলার বাদীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, চিহ্নিত ইয়াবা স¤্রাট ও সন্ত্রাসী নুরুল হক ভুট্রো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। সে সর্বশেষ মানি লন্ডারিংয়ের তিন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন। প্রায় ১ বছর জেলহাজতে থাকার পর অন্তত ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে কারাগার থেকে যাবতীয় কলনাঠি নেড়ে জামিনের দৌড়ঝাপ করে অবশেষে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে বলে একটি সুত্রে জানা গেছে। আজ বা কাল কক্সবাজার কারাগার থেকে বের হবে বলে অসমর্তিত একটি সুত্র জানায়। ইতিমধ্যে সেই ভুট্টো কারাগার থেকে গোপনে বের হওয়ার জন্য কারা কর্র্তৃপক্ষের একটি পক্ষের সাথে ৪ লক্ষ টাকায় চুক্তি করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ভূট্টো বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টোর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ মার্চ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ থানায় ১০৪৪ নং জিডি, ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী হামলায় ঘটনায় টেকনাফ থানায় ১০৯০ নং জিডি দায়ের করা হয়। ঈদের নামাজ শেষে ভুট্টো বাহিনীর প্রকাশ্যে গুলিতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকার প্রবাসী দুদু মিয়ার কন্যা নিহা মনি (৪) নামে এক শিশু কন্যার চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১৯/৪২৫ নং মামলা, টেকনাফ থানায় ২০১৩৯ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বিজিবির ১৩১/৪২ মামলা, নাজিরপাড়ার সর্দার মৃত শেখ আহমদ সিকদারের ছেলে নজির আহমদ সন্ত্রাসী কায়দায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১মে ৫৩/৩৬০ নং মামলা, ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ১৩নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় গুরা মিয়া হামলার স্বাক্ষীকে হামলা ও তার বাড়িতে ভাংচুর চালায়। সে বছর ৫ জুলাই ভুট্টো বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কিরিছ ও লাঠিসোটা নিয়ে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে ১৫/২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ, লোকজনকে মারধর ও কার ভাংচুর করে। এ সময় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কিরিছ ব্যবহারের টেকনাফের কয়েকজন সংবাদকর্মী ছবি তুলতে গেলে তাদেরকে ধাওয়া করেছিল। এছাড়া ভুট্টো বাহিনীর নেতৃত্বে শিলবনিয়াপাড়ায় বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত, কালুর বসত বাড়ি, মোটর সাইকেল ভাংচুর ও হাতের আঙ্গুল কেটে নিয়েছিল। একই এলাকার একজনের মাথা ও আরেকজনের কান ও সাবরাং’র এর এক ব্যক্তির হাতের কব্জি কেটে নেয় এবং গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অপহরণের শিকার ২ পর্যটক ঢাকা শাহবাগ আশুলিয়া থানার নুরুল হক ভূট্টো বাহিনীর বন্দিদশা থেকে টেকনাফ থানার পুলিশ উদ্ধার করে। তাছাড়া দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার পুতুইন্যার পুত্র মোঃ ইসমাইলকে মাথায় ছুরিকাঘাত’সহ একের পর এক নানান অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংঘঠিত করে আসছিল। রয়েছে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে এমআর মামলা যার নং-২৭৪। স্বারক নং-৭৩৪/১৭ইং।
তার বিরুদ্ধে দিনদুপুরে সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার মার্কিন হত্যা, কক্সবাজারের পাঁচ সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা (যার মামলা নং-২৮/১৬)। অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডের থানার মামলা নং-৬০/৩৮৬। বর্তমানে মামলা দুইটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৯ আগস্ট টেকনাফ থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদেরকে তিন মামলায় মোট ১১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এছাড়া ভুট্টো বাহিনীর প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন থানায় কমবেশি ১০টি করে মামলা রয়েছে। বেশিরভাগ মামলা মাদক, অস্ত্র ও অর্থ পাচার আইনে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভূট্টো বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টো দীর্ঘ দিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে অবৈধ টাকা আয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। গড়ে তুলেছে অঢেল সম্পদ। এলাকায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাইনা। এর আগেও সে পুলিশের হাতে আটক হয়ে ফের জামিনে বেরিয়ে এসে বীরদর্পে ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। টেকনাফের ইয়াবা পাড়া খ্যাত ‘নাজির পাড়ার’ এজাহার মিয়ার ছেলে নুরুল হক ভূট্টো (৩৫) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসার সুবাদে তিনি আজ কোটিপতি। শুধু ইয়াবা ব্যবসাতেই তার অপরাধ সা¤্রাজ্য সীমাবদ্ধ নয়। রীতিমতো নিজের নামে বাহিনী গড়ে তুলে সেই ভুট্টো কারাগারে থাকলেও বাহিনীর অন্য সদস্যরা অন্যের জমি জবর দখল, লোকজনকে জিম্মি করে টাকা আদায়, ভাড়াটে সন্ত্রাসী লালন ও মানব পাচারসহ তিনি বিভিন্ন অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘেœ। তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র, জমি জবরদখল ও প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর সশস্ত্র হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে টেকনাফ থানায় ডজনের বেশী মামলা রয়েছে। কিন্তু এসব মামলায় তিনি একাধিকবার জেলে গেলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন পুরোনো অপরাধ জগতে। প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। ফলে দিনের পর দিন তার অপরাধ কর্মকান্ড করতে সে কিছুই তোয়াক্কা করেনা। বরাবরেই কারাগার থেকে বের হয়ে দুর্ধর্ষ এ অপরাধী থেকে যায় আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত ২০১৫ সালে টেকনাফ সদরের শিলবুনিয়া পাড়ায় বসত বাড়ীতে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে কুপিয়ে জখম করে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টো। এছাড়া একই এলাকার কালু নামের এক ব্যক্তির বসত বাড়ী ও মোটর ভাঙচুর এবং হাতের এক আঙ্গুল কেটে নেন তিনি। সাবরাং এলাকার এক ব্যক্তির হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে তার দ্বারা। একই এলাকার জাফর নামের দু’ব্যাক্তির একজনের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া এবং আরেকজনের কান কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভূট্টোর বিরুদ্ধে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাস কক্সবাজারে বেড়াতে আসা দুই পর্যটক অপহরণের শিকার হন ভূট্টোর সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজনের হাতে। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর বাহিনী প্রধান ভূট্টোর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় অপহরণের শিকার দুই পর্যটক ঢাকার আশুলিয়া থানার হাসান আলীর ছেলে মোহাম্মদ আকিব ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহদাতপুর থানার তৈয়ুজাল মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ মজনুকে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে টেকনাফ থানায় অপহরণ মামলা রুজু রয়েছে।
এছাড়া গত ২০১৪ সালে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষ টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার মো. পুতুইন্যার ছেলে মো. ইসমাইলকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করার ঘটনা ঘটে। গত ২০১৫ সালের ২১ মার্চ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হুমকির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় জিডি দায়ের করা হয়।
টেকনাফ থানা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের নামাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে ভূট্টো বাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্যে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হয় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া প্রবাসী দুদু মিয়ার কন্যা নিহা মনি (৪) নামে এক শিশু। এতে শিশুটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানায় ১৯/৪২৫ নং মামলা, ২০ হাজারের বেশী ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বিজিবির দায়ের করা ১৩১/৪২ নং মামলা, নাজির পাড়ার মৃত শেখ আহমদ সিকদারের ছেলে নজির আহমদকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ মে টেকনাফ থানায় ৫৩/৩৬০ নং মামলা, অপহরণের আরেক অভিযোগে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর টেকনাফ ১৩ নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নুরুল হক ভূট্টোর সন্ত্রাসী বাহিনীতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে তার ভাগিনা হেলাল, আবছার (প্রকাশ) কুপা আবছার, কামাল প্রকাশ বুলেট কামাল, ভুট্টোর ভাই নুরুল আবছার প্রকাশ খোকন, সহযোগী নবী উল্লাহ্ প্রকাশ গুটি নবি উল্লাহ্ ও হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সচেতনমহল ও মামলার বাদিপক্ষ জানিয়েছেন, ডজন মামলা, ইয়াবা ও মানি লন্ডারিং মামলা থাকার পরেও কিভাবে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসবে তা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাকে মুক্তি না দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মামলার বাদিপক্ষ।