বেপরোয়া ইলিয়াছ সওদাগর, প্রবল ঝুঁকিতে বিটিসিএল’র টাওয়ার
শাহেদ মিজান
কক্সবাজারের সবচেয়ে আলোচিত পাহাড়খেকো বহুল আলোচিত ইলিয়াছ সওদাগরের কারণে কক্সবাজার শহরের পাহাড়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে মনে করেন সাধারণ মানুষ। নির্বিচারে তার পাহাড় কাটার বিষয়টি প্রায় আলোচিত হলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এই ভয়ংকর পাহাড়খেকো। তার পাহাড় কাটার ধ্বংসযজ্ঞও সমানতালে অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানেও কলাতলী বাইপাস মোড়ের টিএনটি পাহাড় ভয়ংকরভাবে কেটে সাবাড় করছে এই ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগর। পাহাড় কেটে ভূমি সমতল করে করা হয়েছে প্লট। এই প্লটগুলো বিক্রি করছে কোটি টাকায়। অন্যদিকে ভয়াবহভাবে পাহাড় কাটার ফলে প্রবল ঝুঁকির মুখে পড়েছে সরকারি সম্পত্তি বিটিসিএল’র মাইক্রোয়েভ টাওয়ারটি।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে রাতে-দিনে ভাড়াটে মাস্তান ও শ্রমিক দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটলেও ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগরের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই নিয়ে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টিএনটি পাহাড়ে অবস্থিত বিটিসিএল’র টাওয়ারটি কারণে এই পাহাড়ের নামকরণ হয় ‘টিএন্ডটি পাহাড়। এই পাহাড়ে নজর পড়ে ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগরের। নানা কৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় লোকজনকে ম্যানেজ করে পাহাড়ের দক্ষিণের বিশাল অংশ দখল করেন ইলিয়াছ সওদাগর। দখলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাতের গভীরে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ শ্রমিক দিয়ে কেটে চলে পাহাড়। এরই মধ্যে পাহাড় কেটে ২৫ গন্ডার বেশি সমতল ভূমি বানানো হয়েছে। ওই ভূমিতে ইটের দেয়াল দিয়ে বানানো হয়েছে নির্দিষ্ট প্লট। সেই সাথে বানানো হয়েছে কয়েকটি দোকানঘরও। এখনো প্রতিদিন সমান ভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে। রাতের বেলায় পাহাড় কাটার শব্দে আশেপাশের বসতবাড়ির লোকজন ঘুমাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, প্রভাব বিস্তার করে পাহাড় কাটছেন ইলিয়াছ সওদার। পাহাড় কাটার জন্য শ্রমিক ছাড়াও পাহারার নিয়োগ দিয়েছেন ১০ জনের বেশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী। এসব সন্ত্রাসী নানা রকম অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই প্লটগুলো পাহারা দেয়। ওই ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আশেপাশেরও লোকজনকে নানা কারণে লাঞ্ছিত ও হুমকি দেয়। একই সাথে পাহাড় কাটা ও প্লট তৈরি দেখভালের জন্য ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগর দিনের অধিকাংশ সময় সেখানে অবস্থান করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাটতে কাটতে ইতিমধ্যে পাহাড়ের মধ্যখান পর্যন্ত কাটা হয়েছে। কাটা সমতল ভূমিতে ইটের দেয়াল দিয়ে খন্ড খন্ড করে প্লট তৈরি করা হয়েছে। তারপরও কাটা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড় কাটায় নিয়োজিত রয়েছে ১০/১২ জন শ্রমিক। পাহাড় কাটা দেখা না যাওয়ার জন্য সড়কের পাশের সীমানায় দেয়া হয়েছে উঁচু টিনের বেড়া। এতে করে বাইরে থেকে বোঝায় উপায় নেই যে, ভিতরে ভয়াবহ পাহাড় কাটা হচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড় কাটতে কাটতে একদম বিটিসিএল টাওয়ারের কাছ পর্যন্ত চলে গেছে। পাহাড় কাটার ফলে টাওয়ারের ২০ গজের বাইরে গভীর খাদ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্ষার বৃষ্টি নামলেই ভয়াবহ ধরে আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে পাহাড় কাটায় নিয়োজিত এক শ্রমিক জানিয়েছেন, পাহাড় কেটে তৈরি করা এসব প্লট বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্লট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ইলিয়াছ সওদার তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ার কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ওই প্লটগুলো বিক্রি করেছেন। একটি প্লট ৫০ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘মাস দু’য়েক আমরা ওই পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনের প্রতিবেদন চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। ওই ঘটনাটি আমার জানা ছিলো না। এটার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশানে যাবো।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহামদ বলেন, ‘কোনো ভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। আমরা তা হতে দেবো না। পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ মারাত্মক অপরাধ। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবোই।’