বিশেষ প্রতিবেদক:

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলংয়কারী ঘূর্নিঝড়ে জায়গা-জমি, সহায় সম্পত্তি হারিয়ে বেঁচে থাকার আশায় কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ঘনজঙ্গলে বেষ্টিত পাহাড়ে আশ্রয় নেয় দেড় শতাধিক পরিবার। ধীরে ধীরে বন্য জন্তু আর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে জঙ্গল পরিষ্কার করে পাহাড়ের গায়ে ঘর করে এলাকাটিকে বসবাসযোগ্য করে তোলে ঘুর্ণিঝড়ে বাবা মা স্বজনদের হারানো মহেশখালি ও কুতুবদিয়া ও টেকনাফের উপক’লীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। কালের পরিক্রমায় দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী নামে পরিচিত সেই এলাকায় এখন হাজারো পরিবারের বাস। কিন্তু ২৮ বছর ধরে সেই এলাকাটিতে বসবাস করা লোকজন বিজিবি’র বন্দোবস্তী আবেদনের কারণে বর্তমানে উচ্ছেদ আতংকে ভুগছেন। আর মাথার উপরের সেই ছায়াটুকু বাঁচাতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুমিহীন পরিবারগুলো।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক কামাল আরমান বলেন, ২৮ বছর ধরে এই এলাকায় রয়েছি। তখন থেকেই জানি এটি বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের খাস জমি। কিন্তু ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফ সাবরাংয়ের বাপ দাদার বসত ভিটা সাগরে বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয়ের জন্য কোন স্থান না পেয়ে এখানে এসে বাবা মাকে নিয়ে বসতি গড়ি। এতদিন কোন সমস্যা না হলেও হঠাৎ করে বিজিবি মাপঝোঁক শুরু করায় আমরা ভয়ে আছি। আমার মত হাজার পরিবার এখন উচ্ছেদ আতংকে ভুগছেন।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সাধারন সম্পাদক আমিমুল এহসান মানিক বলেন, ৫ এপ্রিল বিজিবি সরকারী সার্ভেয়ার নিয়ে গিয়ে এলাকাটি পরিমাপ করেছে। সেদিন ওই এলাকার জমি তাদের দাবি করে এলাকাবাসীকে সরে যেতে বলেছে। সেই কারণে আমরা এলাকাবাসী শেষ আশ্রয়স্থল বাঁচাতে প্রশাসনের বিভিন্নজনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছি।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী সমাজ কমিটির সভাপতি এস.এম মোরশেদ আলম বলেন, উচ্ছেদ থেকে বাঁচতে আমরা জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, মেয়র, বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার সহ ৬ টি সরকারী দপ্তরে আবেদন করেছি। আশা করছি সরকার আমরা ভ’মিহীন বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিবে।

এদিকে এ বিষয়ে ৩৪ বিজিবি’র অতিরিক্ত পরিচালক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, বিনা কারণেই আতংক গ্রস্ত গ্রামবাসী। এখানে আতংকের কিছু নেই। তাদেরকে উচ্ছেদ করার কোন পরিকল্পনা আপাতত বিজিবি’র নেই।
তিনি আরো বলেন, ২০১২ সালে বিজিবি’র পক্ষ থেকে ৬ একর জমির বন্দোবস্তী চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজিবি হেডকোয়াটার জানতে চায় ওই জমিতে কত মানুষ বাস করে।এরই প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল একদফা জমিটি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু পরিমাপ শেষ না হওয়ায় আবারো আজ পরিমাপ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিজিবি এখনো জমিটি বন্দোবস্তী পায়নি। প্রক্রিয়াটি এখনো প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। বিজিবি বন্দোবস্তী পাওয়ার পরই দখলে যাবে । আর যখন দখলে যাবে তখন ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই যাবে। তাই এনিয়ে আতংক করার কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, বিজিবি’র পক্ষ থেকে জমি ছেড়ে দেওয়ার কোন কথা বলা হয়নি।
এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি ) নাজিম উদ্দিন বলেন, বিজিবি মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর অনেক বাসিন্দাই আমার কাছে এসেছিল। অনেকে লিখিত আবেদন করেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ৯ এপ্রিল দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর ৪০৩ জন বাসিন্দা স্বাক্ষিরত একটি আবেদন পেয়েছি। তারা বিজিবি’র উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনি সুরাহার জন্য এডিসি রেভিনিউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন নিবে না।