ডেস্ক নিউজ:
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলাকারীরা ছাত্র কিনা সন্দেহ রয়েছে’- এমনটি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘হামলাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। চিহ্নিত করার পর অবশ্যই মামলা হবে।’

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ ধরনের হামলা কখনোই ছাত্র সমাজের হতে পারে না। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের ইন্ধন রয়েছে।’

ফেসবুকে ‘মৃত্যুর গুজব’ প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ফেসবুকে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইমরান এইচ সরকার ছাড়া অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাতে বাসায় বসে আমি আন্দোলনের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলাম। একপর্যায়ে ফেসবুকে দেখলাম একজন মারা গেছে। তখন আমি খুব আহত হই। তাৎক্ষণিক খবর নিলাম ঘটনাটা সত্য কিনা। এর মধ্যে দেখলাম, খবরটা ভাইরাল হয়ে গেছে। এটি কেন্দ্র করে গভীর রাতে ছাত্ররা আবার সমাবেত হতে থাকলো।
‘তাদের মুখে মুখে স্লোগান আসলো, ‘আমার ভাই মরলো কেনো?’

‘পরবর্তীতে দেখলাম, যার মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়েছে সে নিজেই ফেসবুকে জানিয়ে দিলো যে, সে মরেনি। এটা মিথ্যা খবর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই যে ভুয়া তথ্য দিয়ে ছাত্রদের উত্তেজিত করা এবং গভীর রাতে ছাত্রদের সমাবেত করা- সবগুলো ঘটেছে, আমার মনে হয় মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে।’

‘যিনি করেছেন তাকে আমরা সনাক্ত করবো। তারপর আইসিটি আইনে মামলা হবে, পরিষ্কার কথা। কারণ এ ঘটনার পর অনেক কিছু ঘটেছে। গভীর রাত্রে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছে।’

‘আমরাও তো অনেক ইস্যুতে আন্দোলন করেছি। কিন্তু কখনও রাত ৯টা কিংবা ১০টার পর রাস্তায় নামিনি। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা গভীর রাতে রাস্তায় নেমেছে।’

সাংবাদিকরা এ সময় বলেন, গুজব ছড়ানো ব্যক্তি তো চিহ্নিত, ইমরান এইচ সরকার। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি একা নন, আরও কয়েকজন থাকতে পারে। সবগুলোকেই আমরা দেখবো।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তারা নাকি মারপিট করছে। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ছাত্রলীগ মারপিটের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এসব অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তেজিত করার পরিকল্পনা ছিল।’

হামলাকারীরা কিছুটা চিহ্নিত, বাকিটাও হবে : ওবায়দুল কাদের

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত চলছে, হামলাকারীরা কিছুটা চিহ্নিত হয়েছে। বাকিটাও চিহ্নিত হবে। এর বিচার করতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে ঢাবি উপাচার্যের বাস ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এ হামলা যে পরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। কারণ, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বিকল করে দেয়া হয়েছে। এটি একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম হামলা হয়েছিল। কিন্তু ভিসির বাসভবন কখনও আক্রান্ত হয়নি। এমনকি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এমন ঘটনা ঘটেনি।

কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠক করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ করে কোট সংস্কারের আন্দোলনে নামেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে এ আন্দোলন অব্যাহত আছে।