সিবিএন ডেস্ক:
ফেসবুকের যে ৮ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে গেছে, তাদের মধ্যে ‘আপনিও’ আছেন কিনা তা জানানোর ব্যবস্থা নিয়েছে সামাজিক মাধ্যমটি।

বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১০টায় এই সংক্রান্ত দুইটি নোটিশের যেকোন একটি ফেসবুকের সকল ব্যবহারকারীরা পাবেন, যার মাধ্যমে জানা যাবে তাদের তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছিল কিনা।

এছাড়াও টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ব্যবহারকারীরা এটাও জানতে পারবে যে- তারা কি কি অ্যাপ ব্যবহার করে এবং এই অ্যাপগুলো কি কি তথ্য সংগ্রহ করে থাকতে পারে।

এ মাসের শুরুতেই ফেসবুক ধারণা প্রকাশ করে প্রায় আট কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের তথ্য লন্ডনভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে গেছে।

ওই গ্রাহকদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। তবে এক কোটি ৬০ লাখ ব্যবহারকারী অন্য দেশের, যাদের মধ্যে প্রায় ১১ লাখ যুক্তরাজ্যে থাকেন।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারের কৌশল নির্ধারণে ওই ফেইসবুক গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহার করেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।

কিউবইউ নামের একটি ডাটা অ্যানালিটিক ফার্মের বিরুদ্ধে তদন্তকে সামনে রেখে তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ফেসবুক।

অ্যাকাডেমিক উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করে কিউবইউ তা ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছিলো কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখবে টেক জায়ান্টটি। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির সাথে অংশিদারিত্ব ছিলো কিউবইউ’এর।

‘অ্যাপ্লাই ম্যাজিক সস’ নামে পরিচিত ‘ইউ আর হোয়াট ইউ লাইক’ পার্সোনালিটি কুইজ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষীতে তদন্তের বিষয়টি সামনে আসে। সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে এই অভিযোগগুলো উঠে আসে।

কিউবইউ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ডাটা অ্যানালিটিক ফার্মটি এবং ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তথ্যগুলো যে অ্যাকাডেমিক ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিলো তা অ্যাপটিতে স্পষ্ট করা হয়েছিলো।

কিউবইউ জানিয়েছে, তারা সবসময় ফেসবুকের রীতি মেনে চলেছে।

১১ এপ্রিল, বুধবার ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠান তা কীভাবে ব্যবহার করছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ কমার্স কমিটি’র মুখোমুখি হবেন ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ।

ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির সাইকোমেট্রিক সেন্টারের সাথে কিউবইউ যৌথভাবে ইউ আর হোয়াট ইউ লাইক ওয়েবসাইটটি তৈরি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা এতে অংশ নিয়েছিলো তারা এ ব্যাপারে সম্মত ছিলো যে তাদের তথ্য ‘অ্যাকাডেমিক ও ব্যবসায়িক’ দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হবে। যেহেতু তা সাইটের টার্ম এন্ড কন্ডিশনেই লিখিত ছিলো। এছাড়াও তথ্যগুলোর সাথে পরিচয় চিহ্নিতকরণের মতো উপাদানগুলো ফেলে দেয়া হয়েছিলো বলেও জানানো হয়।

তবে, ম্যাজিক সসে অ্যাপ্লাইয়ের জন্য বর্তমান টার্ম ও কন্ডিশনে উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র ‘অলাভজনক অ্যাকাডেমিক রিসার্চের’ জন্যই তা ব্যবহৃত হবে, এমনটি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও জানায়, কিউবইউ শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইটের জন্য ইন্টারফেসটি ডিজাইন করে, ব্যবহারকারিদের তথ্যের বিষয়ে সম্যক ধারণা দেয়ার জন্য তা আমাদের মডেলগুলো ব্যবহার করে।

২০১৫ সালের জুনের পর থেকে কিউবইউ এর সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই বলেও তারা জানায়।

ইউনিভার্সিটি সেন্টার আরও দেখায় যে, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডাল, এর একজন অ্যাকাডেমিক এই কুইজটি ডেভেলপ করেছেন, যা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার অধীনেই তথ্য সংগ্রহ করেছিল।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা বা তার অভিভাবক কোম্পানি এসসিএল এর সাথে কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি। কোন তথ্য, অ্যালগোরিদম বা দক্ষতা সরবরাবহ করেনি বলেও জানিয়েছে তারা।

প্রকাশক বা বিজ্ঞাপনদাতাদেরর মতো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার টার্গেট করতে সাহায্য করে কিউবইউ। তবে তারা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনাটির মতো রাজনৈতিক বার্তা প্রচারণায় সাহায্য করে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়।

নিজেদের ওয়েবসাইটে ডাটা ফার্ম কিউবইউ নিজেদের বর্ণনা করেছে এভাবে, “অল দ্য বেস্ট কনজিউমার ডাটা সোর্সেস ইন ওয়ান প্লেস”।