সিবিএন ডেস্ক:
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা এবং শিক্ষার্থীদের দাবির বিপক্ষে দাঁড়ানোয় ছাত্রলীগ থেকে গণহারে পদত্যাগ করছেন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
পাশাপাশি চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে এর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন তারা।
আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সহ-সভাপতি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি যৌক্তিক আন্দোলন। এ আন্দোলনে সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা করায় আমি সজ্ঞানে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করছি। শিগগিরই পদত্যাগপত্র জমা দেব।
সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের সাধারণ সম্পাদক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আমি লজ্জিত, ক্ষমাপ্রার্থী। আমি বিবেক বিক্রি করতে পারব না।’
এ ছাড়া ছাত্রলীগের আরো বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ছাত্রলীগের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ক্ষুব্ধ। এবং নিজেদের নাম দ্রুতই ছাত্রলীগের পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিবেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি যৌক্তিক আন্দোলন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা করা মোটেও উচিত হয়নি। এর কারণে ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হবে।
একজন লিখেন, “শেখ মুজিব আমারও পিতা। দেখবো বন্দুকে কতো বুলেট আছে?”
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
“আমার সামনে আমার ছেলেদের ওপর টিয়ারশেল ছুঁড়লেন – এ কী করলেন”
“আমার সামনে আমার ছেলেদের ওপর টিয়ারশের ছুড়লেন- এ কী করলেন”- সোমবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপকালেপুলিশের উদ্দেশে এ কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় পুলিশকে মারধর করতে নিষেধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বললে তারা যায়নি। পরে তারা তাদের ধাওয়া এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আমি তাদের নিষেধ করি। কিন্তু পুলিশ জানায় তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা করেছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষক খালিদ হাসান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, “আমার প্রশ্ন একটাই, আমাদের ছেলেদের গায়ে পুলিশ হাত তুললে কেন?”
এদিকে, ঢাবি শিক্ষক আইনুল ইসলামের এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বন্দনা শুরু হয়েছে। শিক্ষর্থীরা তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সালমা শরিফ এক শিক্ষার্থী তার টাইমলাইনে লিখছেন, শামসুজ্জামান স্যার, আপনি শহীদ হয়েছেন মারা যান। আপনি আজও আছেন আমাদের শিক্ষকদের মাঝে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকাকালে আইয়ুরবিরোধী আন্দোলনকালে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।