শীর্ষনিউজ, ঢাকা: চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোনো দেশে যুগের পর যুগ কোটা প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা চলে আসছে। বিশেষ করে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশের কম- মুক্তিযোদ্ধাদের নামে তাদের নাতি-পুতির জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণে ক্ষুব্ধ মেধাবীরা। সেই সাথে উপজাতি, জেলা, পোষ্য, নারী ও প্রতিবন্ধীসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। বাকি ৪৪ শতাংশ পদের জন্য লড়াই করতে হয় লাখ লাখ মেধাবী তরুণকে। ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যা দেশের সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কোটা পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে চলে না। একটি পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীকে চাকরিতে সুযোগ দিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু থাকতে পারে। কিন্তু যখন সেই জাতিগোষ্ঠী অগ্রগামী জাতিতে পরিণত হয়, তখন কোটা আর থাকে না। যেমন- ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে কোটা-পদ্ধতি চালু আছে। যে সকল উপজাতি পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য কোটা। কিন্তু অন্য রাজ্যে সেই উপজাতি যদি পিছিয়ে না থাকে, তবে সেখানে তাদের জন্য কোনো কোটা থাকে না। আমেরিকাতে বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি ভিসা নামক কোটা চালু ছিল। কিন্তু বাঙালি জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়ার পর ডিভি তুলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

অথচ বাংলাদেশে চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিটি কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে নির্ধারণ হয়ে গেছে। বিসিএসে মেয়েরা মেধা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরেও তাদের জন্য কোটা রেখে দেয়া হয়েছে। এটা তাদের অপমান বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিসিএস কিংবা অন্য অনেক পেশায় এখন নারীরাই পুরুষদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। অথচ নারীদের জন্য ১০% কোটা রেখে তাদের মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। কারণ কে কোটা সুবিধাভোগী এবং কে নয়; বুঝার সুযোগ নেই। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা- দেশে অসংখ্য সুবিধাভোগী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হচ্ছে নানা কায়দায় প্রতিনিয়ত। প্রতিটি সরকার বারবার গেজেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাড়িয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করেছে। অথচ কোটি মেধাবী যুবকের রাত জাগা পরিশ্রম ও স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এই কোটা পদ্ধতি। পৃথিবীর অনেক দেশেই মুক্তিযোদ্ধা আছে। কিন্তু কোথাও কোটা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার এবং সম্মান করার অনেক উপায় আছে। তাই বলে তাদের নাতি-পুতিদের জন্য আকাশচুম্বী কোটা সংরক্ষণ করে, বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের বঞ্চিত করা কোনো পদ্ধতি হতে পারে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের হাসির পাত্র বানানো হচ্ছে। অথচ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নিয়ামক ছিল চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা। কিন্তু সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উদ্দেশ্য প্রচলিত কোটা প্রথার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে মেধাবী তরুণদেরকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। যা দেশের জন্য চরম হতাশাজনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীরা বলছেন, পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রাম জেলার জন্য কোটা রাখা যায়। তাই বলে ঢাকা এবং ফেনীর মতো এগিয়ে থাকা জেলার সংরক্ষিত কোটা অনিয়ম এবং দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে। তারা এও বলছেন, নারী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানগণ এবং উপজাতিরা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এতই পিছিয়ে পড়ে নেই যে, বছরের পর বছর তাদের জন্য কোটা রেখে দিতে হবে। শুধু রেখে দিচ্ছেই না, প্রতিটি সরকার কোটা সুবিধা বাড়িয়েই চলেছে। এতে অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে সরকারি দফতরগুলো। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। ব্যাহত হচ্ছে সুশাসন। তাই, এখন পিছিয়ে পড়া মেধাবীদের জন্য কোটা নির্ধারণ জরুরি বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ২ শতাংশেরও কম। অথচ তাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা। বাস্তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার এখন আর চাকরির বয়স নেই। এই কোটা ব্যবহার করা হচ্ছে নাতি-পুতিদের জন্য। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মত বিশ্লেষকসহ অনেকের। স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ ও পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ২ লাখ মা-বোনসহ ৩২ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা কোনো কোটার আওতায় নেই। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। তারপরও আন্দোলনকারীরা সম্পূর্ণ কোটা তুলে দেয়ার কথা বলছেন না। তাদের দাবি এটা ১০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা। তাই প্রচলিত কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন মেধাবী তরুণরা। বিশিষ্টজনরাও তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত কোটার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দেশের মেধাবী ও বঞ্চিত তরুণরা আন্দোলন করে আসছেন। তবে অদ্যাবধি তাদের আন্দোলনের কোনো সুফল আসেনি। বরং বারবার আন্দোলনে নেমে রাজপথে পুলিশ ও সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনসহ সরকার সমর্থক নানা অঙ্গ সংগঠনের কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মেধাবীরা।

বিশেষ করে ২০১৩ সাল থেকে এই আন্দোলন জোরদার হয়। যা মাঝে ঝিঁমিয়ে পড়লেও চলতি বছরে আবারও চাঙ্গা হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান কোটা প্রথার সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ার পর নতুন করে আন্দোলনে সোচ্চার হন কোটা বিরোধীরা।

রোববার যা ঘটলো
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সবশেষ গতকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে পূর্বঘোষিত পথযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। দিনের আন্দোলন রাজধানীসহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু রাতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, ফাঁকাগুলি, জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়। শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। থেমে থেমে যা চলে সোমবার ভোর পর্যন্ত। এ সময় শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বরে পুলিশ ও সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত তরুণ ও মেধাবী শিক্ষার্থী। আহতদের তালিকায় ঢাবির ১০ ছাত্রীও রয়েছেন। এদিকে সিদ্দিক নামে ঢাবির এক শিক্ষার্থীর চোখ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বেশ ক’জন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আহতদেরকে।

এদিকে গতরাতে ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ঢাবির বর্তমান পরিস্থিতি থমথমে।

সূত্রমতে, এবার ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে ১৪ মার্চ হাইকোর্ট মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলা ও দেড়শতাধিক মেধাবী চাকরিপ্রার্থীকে গ্রেফতার করে। পরে আন্দোলনকারীদের ৮০০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানা পুলিশ মামলা করে। এর পর রোববার সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও যে কোটা বিরোধীরা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন, তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। যদিও গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে সরকারের এক প্রভাবশালী এমপি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবহিত। তিনি সরকারের প্রভাবশালী এজনমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদককে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। সোমবার তাদের বসার সময় নির্ধারণ রয়েছে।

এদিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে ‘বসতে প্রস্তুত’। তবে দুপুর দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই বৈঠক কোথায় কখন হবে- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অপরদিকে গতকালের মতো আজও সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চাকরি বঞ্চিত ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

প্রচলিত কোটা পদ্ধতি
বর্তমানে দেশে সরকারি, আধা সরকারি ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতি-পুতিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, ৫ শতাংশ উপজাতি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে। সব মিলিয়ে সংরক্ষিত কোটা রয়েছে ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ পদে চাকরির জন্য লড়াই করতে হয় মেধাবীদের। এতে প্রকৃত মেধাবীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ভেঙে পড়ছে জনসেবা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। যা একটি দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অন্তরায়। এছাড়া মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধা সরকারি, প্রতিরক্ষা ও জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য সংরক্ষণ করে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার।

সংবিধান কী বলছে?
সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ সম্পর্কিত তৃতীয় ভাগের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কেবল ধর্ম গোষ্ঠী বর্ণ নারী, পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য করতে পারবে না। একই অনুচ্ছেদের ২ ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। ৩-এ বলা আছে, কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নারী পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না। এই অনুচ্ছেদের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে।
একই ভাগের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। এই অনুচ্ছেদের (২) ধারায় বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নারী পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবেন না। কিংবা সেই ক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। তবে ৩(ক) তে বলা আছে নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। এ ছাড়া (খ) তে বলা আছে, কোনো ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বি বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যেকোনো আইন কার্যকর করা যাবে। (গ) তে বলা হয়েছে, যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যেকোনো শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত রাখা যাবে না।
এসব বিধান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণের ক্ষমতা সংবিধানে অনুমোদন করে। তবে সেটা ঢালাওভাবে সব ক্ষেত্রে এবং স্থায়ীভাবে করা সংবিধান পরিপন্থী। আর কত শতাংশ হারে সেটি করা হবে- সে বিষয়ে বিশেষ বিধান করে নির্ধারণ করতে পারে সরকার। অর্থাৎ সময় ও পরিস্থিতির আলোকে বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ রয়েছে।
দেশে ৪ কোটি ৫৫ লাখ তরুণ বেকার
এদিকে চলতি বছরের গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তির হিসাবে বর্তমানেও বেকারের সংখ্যা ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশে বেকারের হার কমেনি। আগেও ৪ দশমিক ২ ছিল, এখনও তাই আছে। বেকারত্বের হিসাব নিয়ে সরকারি এই সংস্থাটির সবশেষ প্রতিবেদনে এক অস্বাভাবিক তথ্য উঠে এসেছে, যাতে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা শ্রম জরিপের রিপোর্টে দেখা যায়, কাজের ধরণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষ ১০ কোটি ৯১ লাখ। অবশ্য কর্মক্ষম ১০ কোটি ৯১ লাখ হলেও জরিপে শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৩৬ লাখ দেখানো হয়েছে। পরিসংখান ব্যুরোর দাবি, বাকিরা পড়াশোনা করছে অথবা তারা চাকরি খুঁজছে না। সেই হিসাবে চাকরি চেয়েও পাচ্ছে না ৪.২ শতাংশ। এদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৬ লাখ ৮০ হাজার। তবে যারা চাকরি খুঁজছে না- তাদেরসহ দেশে বর্তমানে বেকার যুবক-যুবতীদের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৫ লাখ। আর ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষকে এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হলে বেকারত্বের এ সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে।