নিউজ ডেস্ক:
কোথাও স্লোগান দিয়ে মিছিল বের হচ্ছে, কোথাও আবার শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে ব্যানার ফেস্টুন বানাচ্ছেন। আবার কোনো ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জন করে মহাসড়কে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। তাদের দাবি কোটা বাতিল নয় বরং যৌক্তিক সংস্কার। আর সারাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একডেমিক কার্যক্রম মূলত অকেজো হয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক তাণ্ডব ও পুলিশের হামলার পর সোমবার ভোর নাগাদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ফিরতে দেখা গেছে। এরপরই পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। সোমবার সকালে দোয়েল চত্বর ও টিএসসি ঘুরে দেখা গেছে সেখানে আন্দোলনকারীরা নেই। তবে পুলিশের সতর্ক অবস্থান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফাঁকা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

এদিকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি নগরীর ষোলশহর এলাকায় জড়ো হয়ে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে চারটি ট্রেন ছেড়ে গেলেও তাতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থী শূন্য শ্রেনীকক্ষও। কেউ কেউ ক্লাস করতে এলেও, সহপাঠীদের অনুরোধে তারাও ক্লাস বর্জন করছেন। তবে ক্লাস বর্জন হলেও বিভিন্ন বিভাগের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আজকের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও বর্জন করছেন।

কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও (ইবি) ক্লাস বর্জন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান সড়কে উঠতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি বাধা দেয়। এ সময় তারা মিছিল নিয়ে আবারও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষদ প্রদক্ষিণ করতে থাকেন।

অপরদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এবং ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে দিনব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা দুপুরে মানববন্ধন করার অনুমতি চাইলেও প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ তা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ বিষয়ে জানতে প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এছাড়া ফের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল ১০টায় তারা সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নেন। কোনো বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানা গেছে। এর আগে রোববার বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৮টা এবং রাত দেড় টায় দুই দফায় মহসড়ক অবরোধ করেন রাবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একই দাবিতে সারা দেশে চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরাও সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করেছেন। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে জমা হতে থাকেন তারা। এ সময় বিভিন্ন প্লের্কাড ও ফেস্টুন হাতে তারা কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের এ অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

একই প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী পুরান ঢাকার রাই সাহেব বাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

এছাড়া ক্লাস বর্জন করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এর আগে তারা রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।