বিশেষ প্রতিবেদক:
মহেশখালীতে স্মরণকালে সংঘটিত হত্যাকান্ডের মধ্যে সব চেয়ে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা হচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, মুক্তিযুদ্ধে জেলার প্রথম শহীদ মো. শরীফ চেয়ারম্যানের পুত্র এবং কালারমারছড়ার সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গণি হত্যাকান্ড। ২০১২ সালের ২৯ মার্চ নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটেছিল। এই হত্যাকান্ডটি দেশের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত আলোড়ন তুলেছিল। তারপরও ওসমান চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজনকে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে অভিযোগ করেছেন তারা।

জানা গেছে, ওসমান চেয়ারম্যানকে হত্যার পর উত্তেজিত জনতা হত্যাকারীদের ঘরবাড়ি ভাংচুর করেছিল। ওই ভাংচুরের ঘটনায় ২০১২ সালের ১৩ মে কোহিনুর আকতার নামে এক মহিলা বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিল। যার নং- সিআর-০৭/১২। আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডি তদন্ত করে ওই সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এতে মামলাটি সিআর-৪৬/১৩ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে আদালতে বিচারাধীন আছে।

কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দীর্ঘ ৬ বছর পর ওই ঘটনায় আবারো দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দুটি গত বছরের শেষের দিকে হলেও তা প্রকাশ পায় সম্প্রতি। আরো চাঞ্চল্যকর হলো মামলাগুলোতে বাদী ও দু’জন আসামী সংঘটিত ঘটনার সময়ে ছিলো কারাগারে। মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই ঘটনা দেখিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর গত বছরের শেষের দিকে ওসমান চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামীদের লোক মিজানুর রহমান ও শফিউল আলম প্রকাশ বাহাদুর বাদি হয়ে আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলা দু’টি তদন্তের জন্য মহেশখালী থানাকে নির্দেশ দেয়। থানার পক্ষ থেকে মামলা দু’টি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ গাজী।

অভিযোগ উঠেছে, এসআই রাজ্ ুআহামদ মামলা দু’টির মনগড়া ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর কালারমারছড়ায় পুলিশ ও সাধারণ লোকজনের সাথে সংঘটিত একটি ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পুলিশ ও এক শীর্ষ জনপ্রিতিনিধির ইন্ধনে মামলাগুলোর উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। একইভাবে ওসমান চেয়ারম্যানের জামাতা মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী ওসমান গণিকে আসামী করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে কামারমারছড়ায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

ওসমান চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, একই ঘটনায় একটি মামলা বিচারাধীন থাকার পরও ছয় বছর পরে আরো দু’টি মামলা দায়ের করা কতটা প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের প্রতিপক্ষ একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন ব্যক্তি ওসমান চেয়ারম্যানের খুনিদের পক্ষ নিয়ে মামলা দু’টি করিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ওসমান চেয়ারম্যানের বড়পুত্র ও হত্যা মামলা বাদি এড. নোমান শরীফ জানান, একই ঘটনায় একটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মামলার কথা গোপন করে ছয় বছর পর ওই ঘটনায় পুনরায় আরো দু’টি মামলা করা হয়েছে। একটির বাদি মিজানুর রহমান তৎকালীন সময়ে কারগারে ছিলো। একইভাবে আসামী করা দু’জনও কারাগারে ছিলো। সবচেয়ে দু:জনক হলো, মামলায় দু’জন যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীকেও আসামী করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় এই মামলাগুলো কতটা ষড়যন্ত্রমূলক।

কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওসমান চেয়ারম্যানের ছোটপুত্র তারেক শরীফ বলেন, ‘প্রভাব বিস্তারে বাধা এবং ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম চৌধুরী ও তার আশ্রয়দাতা একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি আমাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। একটি মামলা বিচারাধীন থাকারও পরও একই ঘটনা নিয়ে ছয় বছর পর আরো দু’টির মামলা করেছে এবং তারা পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। একইভাবে আরো নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ওই মামলায় নিরাপরাধ লোকজনকে আসামী দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক ও প্রতিহিংসামূলক।’

যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী আবদুল গণি বলেন, ‘দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু বিপরীত চিত্র মহেশখালীতে দেখা গেলো। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীর নাতি বাদি হয়ে আমরা দু’জন যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এসআই রাজু আহামদ গাজী যুদ্ধাপরাধী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এর চেয়ে দু:খজনক কি হতে পারে। মূলত কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে যুদ্ধাপরাধীরা এই ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর প্রতিকার দাবি করছি।’

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ওসমান চেয়ারম্যানের জামাতা ওসমান গণি বলেন, ‘এই মামলা দু’টি গোপন আঁতাত করে করা হয়েছে। মামলার এজাহারে আমার নাম না থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বিতর্কিত এসআই রাজু আহামদ আমাকে আসামী দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে- যা অত্যন্ত জঘন্য। মূলত সবকিছু হচ্ছে একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধির ইশারায়।’

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রচারণা চালানো মনোয়ন প্রত্যাশীদের কোনোভাবে বাধা দেয়া না হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আমাকে মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাবো। তার কাছে বিচার চাইবো।’