আবদুর রাজ্জাক:
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনের খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র বলাৎকারের শিকারের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
ভিকটিমের মা বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৯ (১)/৩০-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী -২০০৩;ধর্ষন ও সহায়তা করার অপরাধে ৫ এপ্রিল মামলাটি করেন। যার নং-৯/২৩০/২০১৮।
এ মামলার আসামী একই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র হৃদয় শর্মা ও অহিদুল ইসলাম শাহীনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজার আদালতে তাদের জামিন চাওয়া হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

হৃদয় শর্মা (১৪) উখিয়া মরিচ্যা এলাকার সুপাল শর্মার ছেলে এবং অহিদুল ইসলাম শাহীন (১৫) কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা বাংলাবাজার ডিককুলের আলতাজ আহমদের ছেলে। তারা উভয়েই দশম শ্রেনীর ছাত্র।

এর আগে ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে (৪ এপ্রিল) রাত ১০ টার দিকে ছাত্রবাস থেকে হৃদয় শর্মা ও অহিদুল ইসলাম শাহীনকে আটক করে সদর থানা পুলিশ।
এদিকে থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ রাত ১ ঘটিকার সময় কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আটককৃত ওই স্কুলের ১০ শ্রেণীর ২ ছাত্র কর্তৃক বলাৎকারের শিকার হন স্কুল ছাত্রাবাসে থাকা ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক ছাত্র ( সংগত কারনে নাম প্রকাশ করা হল না)।
পরে বুধবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)তে ভর্তি হন ভিকটিম। ঘৃণিত ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হাসপাতালে দেখতে যান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন প্রিন্স। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
এরপরই কক্সবাজার সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযানে গিয়ে অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে স্কুলের ছাত্রাবাস থেকে রাত ১০ টার দিকে আটক করে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে অভিযানকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সোলতান, ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দিনসহ মান্যগন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিকটিম (অডিও-ভিড়িও ভয়েস রেকর্ড সংরক্ষিত) অভিযোগ করে বলে, হৃদয় শর্মা ও অহিদুল ইসলাম শাহীন বেশ কিছু দিন ধরে তাকে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে বলাৎকার করে আসছিল। তারা ঘটনাটি প্রকাশ না করতে তাকে চাপ দেয়। ভয়ে ঘটনার কথা কাউকে বলেনি।স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে ঘটনাটি প্রকাশ না করতে ভয় দেখায়।
ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি হোস্টেল সুপার মাস্টার আবুল কাসেমকে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি বলে ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ। এ জন্য তিনি দায় এড়াতে পারেনা বলে অভিভাবকরা মনে করেন।
অবশেষে ভিকটিমের কুসুমে ব্যথা অনুভব হওয়ায় বুধবার (৪ এপ্রিল) সকালে প্রকাশ করে।
বলাৎকারের শিকার ছাত্রের মা (নাম প্রকাশ করা হলোনা) দুঃখ ও আবেগভরা ভাষায় বলেন, আমার ছেলেকে ভাল রেজাল্ট করার জন্য হোস্টেলে দিয়েছিলাম।হোস্টেলে ভর্তি করার পর প্রায় সময় তাকে নির্যাতন করা হতো বলে জানাতো।আমি বিশ্বাস করতাম না।মনে করতাম, লেখাপড়ার ভয়ে এসব বলছে। এরপরও আমার বাচ্চাকে চাপ সৃষ্টি করে হোস্টেলে পাঠাই।পরবর্তীতে এ সমস্যার কথা শুনতে পাই।
৪ এপ্রিল আমার ছোট বোন হোস্টেলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, আব্বু তুমি কেমন আছ? এরপর সমস্যা সে তার ঘটনাটি বিস্তারিত খোলে বলে আমাদের।
এব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ভিকটিমের মা বাদী লিখিত থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করলে এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।
ওসি জানান, আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই মাস আগে ওই স্কুলে নিজ ছেলের ফলাফল জানতে গিয়ে শিক্ষক নামধারী কিছু কলংকিত মানুষের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এক অভিভাবক।
এ সময় অভিভাবকের হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পায়। তোলপাড় হয় সবখানে। নিন্দার ঝড় উঠে সামাজিক মাধ্যমে।
ঘৃণিত এই ঘটনার রেশ না কাটতে আবারো একই স্কুলে আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বিবেকবানদের নাড়া দিয়েছে। ধিক্কার উঠছে সবখান থেকে।
অবশ্যই অভিভাবক নির্যাতনের ঘটনায় ৬ আসামীর মধ্যে প্রধান শিক্ষক মাস্টার জহিরুল হক পলাতক থাকলেও ঘটনার অন্যতম হোতা বোরহান উদ্দিন কারাগারে রয়েছে।