বিদেশ ডেস্ক:
আগামী জুনের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে; জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল। তাকে উদ্ধৃত করে বৃহস্পতিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে এরইমধ্যে সেখানে ৫০ হাজার রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। বাকিগুলো দুইমাসের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। জুনের প্রথম সপ্তাহেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। জাতিসংঘ চায়, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ায় কাউকে জোর করে ভাসানচরে পাঠানো যাবে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় যারা কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে যেতে চান, তাদেরকেই সেখানে নেওয়া হবে। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর অবস্থার ক্রমেই অবনতির কারণে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে রাজি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাগত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অবশ্যই স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ হতে হবে। তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে নিরাপদে।

২০০৬ সালেই বঙ্গোপসাগরে ভাষানচর দ্বীপটির উৎপত্তি। ২০১৫ প্রথম এই পরিকল্পনার কথা বলার সময়ই অনেক সমালোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরাও ওই দ্বীপে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুযোর্গের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ঘুর্ণিঝড় বা বন্যায় মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কাও জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে। প্রথম ধাপে পুনর্বাসনের এই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হলেও আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর আবারও এটি হাতে নেওয়া হয়। গত বছর ডিসেম্বরে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হবে। তাতে পুনর্বাসন করা হবে এক লাখ ৩ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে। এ লক্ষ্যে গত মাসের শেষদিকে (নভেম্বর, ২০১৭) একনেকে ২৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের আবাসন বিষয়ক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ জুনে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। তবে এনিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি এএফপিকে বলেছেন, আমরা এই সময়ের কথাই চিন্তা করছিলাম। আর এই প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছায় হতে হবে। কাউকে জোর করে পাঠানো যাবে না। তাদের বোঝাতে হবে সেখানে তারা কি অবস্থায় থাকবে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আশঙ্কা, জুনে বৃষ্টির মৌসুমে বন্যা ও ভূমিধসের শিকারের আশঙ্কায় রয়েছে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা। আসন্ন বৃষ্টির মৌসুমকে সামনে রেখেই রোহিঙ্গাদের দ্বীপটিতে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান শাহ কামাল। সবচেয়ে কাছের জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দ্বীপটি এক ঘণ্টার নৌকাপথ। বুধবার শাহ কামাল বলেছেন, ‘আমরা এক লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা করছি। ৩১ মে’র মধ্যে নৌবাহিনীর সদস্যরা ১৪৪০টিরও বেশি বড় বাড়ি তৈরি করবে।’ তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় অংশ নিতে পারবেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, এখনও ভাসানচরে বন্যাঝুঁকি রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া আবাসন প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে শাহ কামাল জানান, দ্বীপটি যেন বৃষ্টিতে জলোচ্ছাস বা বন্যার শিকার না হয় তাই নিম্নাঞ্চল ভরাট ও চারপাশে বাঁধ দিচ্ছে নৌবাহিনী। গত বছর নভেম্বরে এই দ্বীপের উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।বিলম্বের কারণে এপ্রিলের শেষ নাগাদ মৌসুমী বৃষ্টির কাল শুরুর আগেই ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ভাসানচরে নতুন আবাস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রয়টার্সকে বলেছেন, উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। ‘ভাসানচর নিয়ে কেউ কেউ উদ্বেগ জানালেও এর কোনও কারণ নেই। কেননা আমরা বাঁধ নির্মাণ করছি।’ অনেক রোহিঙ্গা দ্বীপটিতে যেতে না চাইলেও কর্মকর্তারা আশাবাদী যে কক্সবাজার ক্যাম্পের অবস্থা দিনদিন খারাপ হওয়াতে অনেকেই যেতে চাইবেন।