বাংলাট্রিবিউন : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথমদিন সোমবার (২ এপ্রিল) প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ট্রাজেডি থেকে বের হয়ে আসতে বেশ কিছু নতুন কৌশল নেওয়ায় এ সফলতা পাওয়া গেছে বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কৌশলগুলোর মধ্যে তিনটি বেশি কাজে দিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। কৌশল তিনটি হলো— প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সিকিউরিটি টেপ দিয়ে আটকানো, পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকিয়ে আসনে বসানো এবং প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নেওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কৌশলের উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘যা যা করা সম্ভব প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে, সেসব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। আশা করছি, প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না।’

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যেসব পদ্ধতি নিয়েছি, তার মধ্যে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সিকিউরিটি টেপ দিয়ে আটকানো, পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে আসনে বসানো এবং প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নেওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।’

তবে প্রথমদিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়নি, এর মানে এই নয় যে আগামী পরীক্ষাগুলোতেও প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের সম্ভবনা একেবারে নেই, তা মনে করেন না সচিব। কারণ, ফাঁসকারীদের চক্র তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
পরীক্ষার শুরুর কয়েকদিন আগে মো. সোহরাব হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস রোধে শত ভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে এ বছর নতুনভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
সোমবার সচিব আরও জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় নেওয়া সব কৌশলই কাজে দিয়েছে। তবে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে দায়িত্বশীল থাকতে পরামর্শ দেন তিনি।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কৌশল বাস্তবায়নে সরকারের মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কৌশল বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্র অনুযায়ী নতুন কৌশলের মধ্যে ছিল— প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সিকিউরিটি টেপ দিয়ে আটকানো, পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে আসনে বসানো, প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নেওয়া, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ, ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছাতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে/দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োজিত রাখার ব্যবস্থা।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও জনসচেতনা বাড়াতে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে জানানোর জন্য বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। শিক্ষামন্ত্রী ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ফেসবুকেও প্রচারণা চালিয়েছেন।
পরীক্ষার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার আমার কাছে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সবগুলো পদক্ষেপই ভালো মনে হয়েছে। তবে খুবই কার্যকরী একটি পদক্ষেপ ছিল ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট জানিয়ে দেওয়া। কারণ, দুটি সেট প্রশ্নপত্র আগে কখনও কেন্দ্রে পাঠানো হতো না। তাছাড়া এবার যেমন ২৫ মিনিট হাতে সময় থাকতে ম্যাসেজ পাওয়ার পরই কেবল প্রশ্নপত্র খুলতে হয়েছে, এমন নির্দেশনা তো আগে ছিল না। ফলে প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর ইচ্ছামতো সময়ে খোলার সুযোগ ছিল।’
ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব জসিম উদ্দীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোন প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তার ম্যাসেজটি পরীক্ষা শুরুর ঠিক ২৫ মিনিট আগে পেয়েছি। মেসেজ পাওয়ার পরই আমরা প্রশ্নের প্যাকেট খুলেছি। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিয়েছি। ফল ভালো পেয়েছি।’