শাহেদ মিজান, সিবিএন:
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ও পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান সেন্টমার্টিনকে অপরিকল্পিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে এই দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এই কারণে ইতিমধ্যে দ্বীপের অস্থিত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনে ক্ষয় হয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এই দ্বীপটি। তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার মারাত্মক প্রভাব দেখতে হবে। সেন্টমার্টিন শুধু কক্সবাজার নয় পুরো দেশের অমূল্য সম্পদ। তাই এই সৌন্দর্য্যরে দ্বীপকে রক্ষা করতে সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একই সাথে প্রয়োজন বোধে আইনও প্রয়োগ করতে হবে।

রোববার কক্সবাজার হিলডাউন সার্টিক হাউজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণকল্পে পরামর্শ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আশরাফ হোসেনের সভাপতিত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত কর্মলালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহামদ ও পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মকবুল হোসেন।

কর্মাশালায় বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক সোলেমান হায়দার,কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

কর্মশালায় বক্তারা আরো বলেন, সেন্টমার্টিনে বর্তমানে যে জনসংখ্যা রয়েছে তা আয়তনের তুলনায় বেশি। এর উপর পর্যটকের অত্যধিক চাপ। দৈনিক নয়’শ পর্যটকের ধারণের সক্ষমতা থাকলেও এর বিপরীতে ১০ হাজার পর্যটক গমণ করছে। অন্যদিকে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল; যেগুলো কোনো ধরণের অনুমোদন নেই। অধিক সংখ্যক পর্যটকের ব্যবহৃত ময়লা-আবর্জনা সাগরে নিপতিত হচ্ছে। এসব চাপে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ নিয়ে ইতিমধ্যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে এখন।

তথ্য মতে, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটের কারণে পানির স্তর অনেক কমে গেছে- যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নি:শেষ হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে দ্বীপের যে মিঠা পানির জলাশয় ছিলো সেগুলো ভরাট করা ফেলা হয়েছে। এতে করে দ্বীপের স্থায়ী ও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেছে। পর্যটকের চাপে কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। প্যারাবন ও কেয়াবন ধ্বংস করা হচ্ছে। কোরাল আহরণ ও ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জাহাজ চলাচলের কারণেও কোরাল ধ্বংস হচ্ছে।

কর্মশালায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সেন্টমার্টিন রক্ষায় জনসচেতনার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সকলে সচেতন হলেই সেন্টমার্টিনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। তবে এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

তারা বলেছেন, সচেতনতার দোহাই দিয়ে কখনো সেন্টমার্টিন রক্ষা হবে না। কারণ যারা সেন্টমার্টিনকে ধ্বংস করায় জড়িত তারা সবাই উচ্চ শ্রেণির ‘সচেতন’ লোক। এমনকি সরকারি দপ্তরও এর সাথে জড়িত। এতে দেখা যায়, সচেতনতা দিয়ে কাজ হবে না। বরং আইন প্রয়োগ করে কঠোর পন্থায় তাদের শাস্তি দিতে হবে। এখনো সময় আছে। ধ্বংস হওয়ার আগেই সেন্টমার্টিনকে রক্ষা হবে।

কর্মশালায় পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।