কলকাতা ২৪: ধর্ম নিয়ে মুসলমানদের অনুকরণ করতে শুরু করেছে হিন্দুরা। একইসঙ্গে ধর্মকে হাতিয়ার করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি।

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী এবং সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনাবলী প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। অস্ত্র নিয়ে মিছিল সকল ধর্মের মানুষদেরই অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, “ধর্ম নিয়ে মুসলমান যেমন মাতে, হিন্দুও তেমন মেতেছে। তলোয়ার নিয়ে মিছিল করা সব ধর্মের লোকদেরই বন্ধ করা উচিত।”

গত বছর থেকে রামনবমীর মিছিল এবং শোভাযাত্রা নজর কেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এর আগে রামনবমীর অনুষ্ঠান হলেও তার বহর অনেক ছোট ছিল। কেন্দ্রের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির সৌজন্যে বদলে গিয়েছে রাজ্যে রামনবমী উদযাপনের চিত্রটা।

বঙ্গে পদ্ম শিবিরের রামনবমী উদযাপনে যতটা ধর্ম বা ভক্তি রয়েছে তার থেকে বেশি রয়েছে রাজনীতি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রামনবমীর মিছিল করা রাজ্য জুড়ে শক্তি দেখিয়েছিল বিজেপি। ২০১৮ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে সেই রামনবমীকে হাতিয়ার করেই রাজনীতি করল ঘাসফুল শিবির। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি দেখানোর মতো কিছুই নেই। কিন্তু, কোনভাবেই এতটুকুও জমি ছাড়া যাবে না বিজেপিকে।

সেই লক্ষ্য নিয়েই রাজ্য জুড়ে রামনবমী পালন করতে শুরু করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে অস্ত্র হাতে মিছিল করেছেন তৃণমূলের নেতারাও। নিজেদের বড় ‘রাম ভক্ত’ প্রমাণ করার তাগিদ অনুভব করতে শুরু করেছে দিদির ভাইয়েরা। এই বিষয়ে তসলিমা নাসরিন বলেছেন, “যে তৃণমূল মুসলিম মৌলবাদীদের তোষণ করতো মুসলিম ভোটের জন্য, হিন্দুদের ভোট কী করে পাবে সে নিয়ে হেডেক ছিল না, এখন দেখছি টনক নড়েছে। এখন বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে রামনবমী কে কতটা মহাসমারোহে পালন করতে পারে।”

পদ্ম এবং ঘাসফুল শিবিরের রামনবমী পালনের সঙ্গে বাংলাদেশের যুযুধান দুই নেত্রী হাসিনা আর খালেদার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন লেখিকা তসলিমা। তিনি বলেছেন, “হাসিনা আর খালেদার মধ্যে যেমন লোক দেখানোর প্রতিযোগিতা চলে কে কত বেশি মুসলমান। বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যেও কে কতটা রামভক্ত তা দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে।” রাজ্যে আসন পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষ নিজেদের জমি শক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করেছেন বাংলাদেশের ‘নির্বাসিত’ লেখিকা।

তসলিমা নাসরিন আরও জানিয়েছেন যে রাজনৈতিক নেতাদের ধর্ম নিয়ে উন্মাদনা দেখে মেতে উঠেছে ধর্মের কারবারিরাও। অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা বিশেষ করে ছোটদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বিষয়টিকেও আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়। “মুসলমানরা হাতে তলোয়ার নিয়ে মহরমের মিছিল করে। হিন্দুরাও যে হাতে তলোয়ার নিয়ে মিছিল করে জানতাম না। পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী’র মিছিল করতে তলোয়ার, পিস্তল নিয়ে নেমেছে হিন্দুরা। পুরুলিয়ায় তো বাচ্চাদের হাতে ছিল তলোয়ার।”

রাজ্যে রামনবমী ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি। পুরুলিয়া এবং রানিগঞ্জের হিংসার ঘটনা এবং উক্ত সকল বক্তব্য তুলে ধরে মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্ট করেন লজ্জার লেখিকা তসলিমা। রামনবমীর শোভাযাত্রার বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে ট্যুইটারে লিখেছেন তিনি। তাঁর মতে, “দুই ধরণের শোভাযাত্রা হয়। একটি অস্ত্র নিয়ে, অপরটি অস্ত্র ছাড়া। অস্ত্র ছাড়া মিছিল আমার পছন্দের।”