ডেস্ক নিউজ:
দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। ২০১৭ সালে সারাদেশে ১১ হাজার ৯৫ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যু বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে গত বছর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রতিটি মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে কোনও না কোনও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে যে ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন, তা তারা পান না। কারণ, তাদের পাশের প্রতিটি মানুষ এখন ব্যস্ত। এজন্য বাড়ছে আত্মহত্যা।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সারাদেশে ১১ হাজার ৯৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলে সাত হাজার ৫৬৯ জন, বিষপানে তিন হাজার ৪৬৭ জন এবং গায়ে আগুন লাগিয়ে ৫৯ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। বরিশালে গত বছর দুই হাজার ৫৮৫ জন আত্মহত্যা করেছেন।

বছরজুড়ে আত্মহত্যার নগরভিত্তিক খতিয়ান২০১৬ সালে সারাদেশের আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ১০ হাজার ৬০০টি। ২০১৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৯৫ টিতে। প্রতিবছর আত্মহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে সারাদেশে ১০ হাজার ২০০ জন এবং ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫০০ জন আত্মহত্যা করেন।

প্রতিবছর সারাদেশে যে পরিমাণ খুনের ঘটনা ঘটে, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে খুনের ঘটনা ছিল চার হাজার ৫১৪টি, অথচ আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ১০ হাজার ২০০টি। একইভাবে ২০১৫ সালে চার হাজার ৩৬টি খুন হয়, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১০ হাজার ৫০০টি। ২০১৬ সালে তিন হাজার ৫৯১টি এবং ২০১৭ সালে খুনের ঘটনা কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৫৪৯টিতে।

বরিশালের পর ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে। এই বিভাগে গত বছর দুই হাজার ৫৮৫ জন আত্মহত্যা করেন। এরপর যথাক্রমে রংপুরে এক হাজার ৪৩৩ জন, সিলেটে এক হাজার ১৯৭ জন আত্মহত্যা করেন। অন্যান্য বিভাগেও এই সংখ্যা উদ্বেগের। রেলওয়ে রেঞ্জেও আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে গত বছর। তৃতীয় সর্বোচ্চ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে রেলওয়ে রেঞ্জে। এই রেঞ্জে এক হাজার ২৩১ জনের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

বিশ্বব্যাপীও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (এইচডাব্লিউও) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের যত মানুষ যুদ্ধবিগ্রহে মারা যায়, তার চেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনায় মারা যাচ্ছে।

বছরজুড়ে আত্মহত্যার রেঞ্জভিত্তিক খতিয়ানআত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন মানুষ যখন তাকে সহযোগিতা ও সমর্থন করার মানুষ চারপাশে পান না, তখন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো মানসিক চাপ ও বিষাদগ্রস্ততা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় যন্ত্রণার স্থায়ী অনুভূতি এবং আত্মহত্যার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনড় এক বিশ্বাস। একসময় বিষাদগ্রস্ত মানুষটি মনে করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। আর তখনই তিনি আত্মহত্যা করেন।’

ড. মো. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘জীবনধারণের যন্ত্রণা সব সময় তাকে চাপের মধ্যে রাখে এবং এই চাপ বহনে সে নিজেকে অক্ষম ও অযোগ্য মনে করে। আমাদের ব্যস্ততার কারণে সম্পর্ক ও সহযোগিতা কমে যাচ্ছে। আগে যেভাবে আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিশতাম, বেড়াতে যেতাম, এখন আর সেটা হচ্ছে না। এ কারণেই এসব ঘটছে।’

এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্র ও পরিবারের ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে এসেছেন, এরকম অনেক ক্লাইন্টের চিকিৎসা আমি করছি। তাদের যখন জিজ্ঞাস করি, ‘আপনি কেন আত্মহত্যা করতে চান?’ তারা যেসব সংকট ও অভাবের কথা বলেন, সেগুলো পূরণের চেষ্টা হলে দেখা গেছে ঝুঁকিটা কমে আসে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যার সংখ্যা কমে আসবে।’ এ জন্য সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।