মোহাম্মদ ফারুক, পেকুয়া:
উজানটিয়া জেটিঘাট করিমদাদ মিয়ার ঘাট হিসাবে অধিক পরিচিতি। ১৯৯৫ সালে তৎক্ষালীন বিএনপি সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ এলজিইডির মাধ্যমে ঘাটটি নির্মাণে সহযোগিতা করেন। পেকুয়ার উজানটিয়ার সাথে মাতারবাড়ি-মহেশখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অন্যতমও ঘাটটি। উপকূলীয় এলাকার লোকজন লবণ ও মৎস্য পরিবহনের ঘাটটি ব্যবহার করে থাকে। ঘাটটির বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। সিঁড়ির পিলার দেবে যাওয়ায় যে কোন মূহর্তে ভেঙ্গে যেতে জেটিঘাটটি। ধ্বসে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মগনামায় নির্মিতব্য সাবমেরিন ঘাঁটি ও করিয়ারদিয়ার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য প্রজেক্টসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলছে ঘাটটি।

সম্প্রতি মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ ও করিয়ারদিয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনেক মালামাল ও দেশী বিদেশী প্রকৌশলীরা পারাপারে এ ঘাঁট ব্যবহার করছেন। তাছাড়া করিয়ারদিয়া ও উজানটিয়ায় উৎপাদিত লবন ও মাছ এঘাট দিয়েই নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। নিলাম ডাকের মাধ্যমে সরকার নিদৃষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে।

অনেক গুরুত্বপূর্ন ঘাঁটটির বর্তমান বেহাল দশায় পড়ে আছে। সিঁড়ির পিলার দেবে যাওয়ায় মারাত্বক দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। মাস কয়েক আগে একটি কার্গো বুট ওই জেটিঘাটে দূর্ঘটনায় পধিত হলে বর্তমানে মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে জেটিঘাটটি। দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ অদ্যবধি নেননি। যার কারণে এলাকাবাসীর মাঝেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় সরকার বহু উন্নয়নের রুপরেখা দাঁড় করালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ঘাটটি সংস্কার হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর টানা বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে জোয়ারের পানি ও তীব্র ¯্রােতের কারণে জেটিঘাটটি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। এরই মধ্যে বিগত ৩মাস আগে একটি কার্গো বুট ওই জেটিঘাটে মেরে দিলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। পুরো ঘাটটি যে কোন মূহর্তে ধ্বসে যাওয়ার কথাও বলেছেন অনেকে।

স্থানীয় মৎস্য প্রজেক্টের মালিক একই এলাকার ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমইউপি মো: এহেসান, বাহার উদ্দিনসহ আরো অনেকেই জানান, ঘাটের ৪/৫টি পিলার সম্পূর্ন দেবে গেছে। যার ফলে ঘাটটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই পুরো ঘাটটি ধ্বসে পড়বে। এক বছরের রাজস্বের টাকা দিলেও ঘাটটি সংস্কার হয়ে যায়। আমরা দ্রুত ঘাটটি সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।

জেটিঘাটের ইজারাদার সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, জেটিঘাটটি উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক মানুষের যাতায়ত অন্যতম মাধ্যম। এছাড়াও সরকার বর্তমান বছর এটি ইজারা দিয়ে ১লাখ ৮০ হাজার টাকার উপরে রাজস্ব আদায় করেছে। এক বছরের ইজারার টাকা দিলে জেটিঘাট সংস্কার হবে। এলাকাবাসীও শান্তিতে চলাচল করতে পারবে।

লবণ ও চিংড়ি ব্যবসায়ী উজানটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরী মিন্টু জানান মহেশখালী সোনাদিয়া বন্দর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, করিয়ারদিয়া চিংড়ি জোনের যাতায়াত ছাড়াও এ ঘাটটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন বিকেলে কয়েকশ দর্শনাথী আসেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ এ জেটিঘাটটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুর ইসলাম চৌধুরী বলেন, মাতামহুরী নদীর তীব্র ¯্রােতে ঘাটটি অনেক আগেই দেবে গিয়েছিল। বর্তমান মারাত্বক অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কারের কোন ধরণের উদ্যোগ এখ পর্যন্ত নিচ্ছেনা। এভাবে চলতে থাকলে পুরো ধ্বসে পড়ে মারাত্বক ক্ষতির সম্মোখিন হবে এলাকাবাসী।